বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীতে জলাবদ্ধতা যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর।
সোমবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। তবে বিকেল ৪টার দিকেও পশ্চিম ধানমন্ডির বিভিন্ন অলিগলির কোথাও কোথাও ছিল প্রায় হাঁটুসমান পানি। যে পানি ঢুকে পড়েছিল দোকানে-দোকানে। কোনো কোনো ভবনের নিচতলায়ও ছিল পানি। সেসব ভবনের গলিতে পানির মধ্যেই মোটরসাইকেল রাখতে দেখা যায়।
নানা ধরনের আবর্জনাভর্তি এই পানি এড়াতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেকেই রিকশায় চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। কেউ কেউ পানি পার হচ্ছিলেন ভ্যানে করে। আবার অনেক পথচারী এই নোংরা পানি ভেঙেই চলাচল করছিলেন।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পশ্চিম ধানমন্ডির ইউসুফ হাইস্কুলের সামনে কয়েকটি শিশুকে দেখা যায় ৮-১০টি ভ্যান নিয়ে হাঁকডাক করতে। তারা বলছিল, ‘এই পানি পার, পানি পার। মামা ওডেন ১০ ট্যাকা। যাইবেন? যাইবেন? না গেলে পস্তাইবেন। এই পানি পার, পানি পার। পানি পার ১০ ট্যাকা।’
সেখানে কথা হয় সুমন ও ইমরান নামে দুই শিশু ভ্যানচালকের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তারা জানায়, পশ্চিম ধানমন্ডির ইউসুফ হাইস্কুলের সামনে থেকে চেয়ারম্যান গলি পর্যন্ত মূল সড়ক ও অলিগলিতে হাঁটুপানি সমান পানি জমেছে। সব মিলে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় এই জলাবদ্ধতা রয়েছে, যে পথ পার করে দিচ্ছে তারা।সেখানে কথা হয় দিলশাদ আরা নামের এক পথচারীর সঙ্গে। জলাবদ্ধতা নিয়ে চরম বিরক্তি প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সরকারি কাজের জন্য শুনি এত এত ট্যাকা দেয়। কী করে ওসব ট্যাকা দিয়ে। সামান্য বৃষ্টি আইলেই হাডুপানি হইয়া যায়।
‘চলতে পারি না। কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়। পুরুষরা তাও প্যান্ট, জামা গোডায়-গাডায় চলতে পারে। আমরা তো পারি না। ভ্যানে করে ১০ টাকায় পার হইতে হইবো এখন।’রাইসুল আলম নামের আরেক পথচারীও তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করেন নিউজবাংলার কাছে।
বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে যদি চলাচলই না করা যায় তাইলে এইটাকে রাস্তা বলেন ক্যামনে? এটা ঢাকা শহরের আরেকটা নদী। এই নদীতে আবার নৌকা চলে না, চলে ভ্যান। ভাড়া দশ।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১২ মিলিমিটার। এ সময়ে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কুমারখালীতে।সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে অধিদপ্তর জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।