বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেলের বাসার গেটে সন্তান কোলে পুত্রবধূ

  •    
  • ১৯ জুন, ২০২১ ২২:১২

শনিবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসান আরিফের ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর বাসার সামনে ১২ দিন বয়সী অসুস্থ কন্যাকে নিয়ে অপেক্ষা করেন নিলা। এরপরও কেউ গেটের তালা না খুললে ফিরে যেতে বাধ্য হন তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফের পুত্রবধূ নিলা আরিফ শিশুসন্তান কোলে নিয়ে তিন ঘণ্টা গেটে অপেক্ষা করেও বাসায় ঢুকতে পারেননি। একনজর দেখতেও পাননি তার প্রথম সন্তানের মুখ, যে শিশুকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন নিলা।

শনিবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসান আরিফের ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর বাসার সামনে ১২ দিন বয়সী অসুস্থ কন্যাকে নিয়ে অপেক্ষা করেন নিলা। এরপরও কেউ গেটের তালা না খুললে ফিরে যেতে বাধ্য হন তিনি।

নিউজবাংলার কাছে অভিযোগ করে নিলা বলেন, ‘আমার দুই বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে তারা (হাসান আরিফের পরিবার) আটকে রেখেছে। তাকে দেখার জন্যই সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ বাসায় ঢুকতে দেননি। পরে বাসার নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে ইন্টারকমে ১৫ থেকে ২০ বার ফোন করা হয়েছে। তাতেও তাদের মন গলেনি।

‘তারা আমার বড় মেয়েকে দেখতে দেননি। আমি বারান্দাতে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম একনজর দেখার জন্য। সে ব্যবস্থাও করেননি তারা। দারোয়ান দিয়ে মুখের ওপর না করে দিয়েছেন। পরে ক্যামেরা দেখে একটি ছেলেকে পাঠিয়ে বলেছেন মেয়েকে দেখতে চাইলে কোর্টে যেতে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথমে বাসার গেটে তালা মেরে রেখেছিলেন। গেটের ভেতরেই ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। পরে লোকজন ও ক্যামেরা দেখে ইন্টারকম পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তারপরও তারা দেখা দেননি। কন্যাকেও দেখাননি।’

নিলা অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা সবাই বাসায়ই আছেন। অথচ পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না।’

গত বুধবার রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় স্বামী মোয়াজ আরিফ, শ্বশুর হাসান আরিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন নিলা আরিফ।

মামলায় তিনি বলেছেন, বিয়ের পর থেকেই স্বামী মোয়াজ আরিফ, শ্বশুর হাসান আরিফ, শাশুড়ি পারভীন আরিফ ও ননদ উম্মে হানি তার ওপর নির্যাতন করতেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জেল খাটিয়েছেন। তার দুই বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে আটকে রেখে নির্যাতন করেছেন। নবজাতক দ্বিতীয় কন্যাসন্তান নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।

মামলায় তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে আমার পেটে লাথি মেরে তিন মাসের একটা বাচ্চা মেরে ফেলেছেন, যা আমাকে ডিঅ্যান্ডসি করতে হয়েছে। আমাকে নির্যাতন করে চুল কেটে দিয়েছেন। আমার গাড়িসহ সবকিছু আটকে রেখেছেন। আমার সিম, মোবাইল ফোন ও ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন। আমাকে ও আমার দ্বিতীয় কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। মোয়াজ আরিফের মোবাইলে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে বিকেল ৫টার দিকে নিলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বরে আমার শ্বশুরবাড়ি। বেলা ৩টা থেকে সেখানে অবস্থান করছি, কিন্তু গেটে তালা। ভেতরে ঢুকতে পারছি না। আপনেরা সাংবাদিক, আমার জন্য কিছু করেন।’

মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইয়াছিন আলী শনিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। প্রধান আসামি মোয়াজ আরিফের বাসায় অভিযান চালিয়েছি। তাকে পাওয়া যায়নি।’

মোয়াজ আরিফের যে মামলায় জেল খাটেন অন্তঃসত্ত্বা নিলা

গত ২৮ এপ্রিল নিলার বিরুদ্ধে নিউমার্কেট থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন মোয়াজ আরিফ। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা নিলা এক মাস চার দিন জেল খাটেন। কারাগারেই নিলার দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। গত ৭ জুন তিনি জামিনে মুক্তি পান।

নিলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যাতে তাদের পারিবারিক নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলতে না পারি, সে জন্যই তারা কৌশলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আমার শ্বশুরের ক্ষমতার অপব্যবহার করে এক দিনের মধ্যেই আমাকে গ্রেপ্তার করান। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে না নিয়েই কারাগারে পাঠান।

‘এখন তারা নতুন করে হুমকি দিচ্ছেন। বলছেন, মামলার চার্জশিট দিলে নাকি আমার ১০ বছরের জেল হবে। এই হুমকি আইনজীবী ও বিভিন্ন মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে।’

নিলার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই মিলন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ও বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে মোয়াজকে মারধরের তথ্য পাওয়া গেছে। মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পাওয়া গেলে আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে।’

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে গত ২৮ এপ্রিল নিউমার্কেট থানায় মামলাটি করেন।

এজাহারে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে মাধবী আক্তার ওরফে নিলা ইসরাফিলকে বিয়ে করেন। তারপর জানতে পারেন, তিনি নিলার তৃতীয় স্বামী। বিয়ের পর নিলার বদমেজাজী চেহারা ফুটে ওঠে। প্রতিনিয়ত টাকার জন্য সে চাপ দিতে থাকে। না দিলে শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে।

‘এমনকি সে আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকেও অপমান-অপদস্থ করে। এমন পরিস্থিতিতে ৮১ বছরের বৃদ্ধ বাবা ও ৭০ বছর বয়সী মা ধানমন্ডির বাসায় চলে যান। এতে আমার ওপর নিলার নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাসার গৃহকর্মীদেরও অসংখ্যবার মেরে রক্তাক্ত করে সে। তার টাকার চাহিদা পূরণ করতে না পারলে দুই বছর দুই মাস বয়সী কন্যাকেও মেরে আহত করে।’

মোয়াজ আরিফ আরও অভিযোগ করেন, নিলা ২৮ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে বাসার গৃহকর্মীদের নির্যাতন করতে থাকলে তিনি বাধা দেন। এতে নিলা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে একটি ছোরা নিয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চোখে আঘাত করেন। পরে বাসায় থাকা গৃহকর্মীদের সহায়তায় উদ্ধার হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

মধ্যরাতে হাইকোর্টের আদেশে বাবার বাড়ি ফিরেছিল দুই শিশু

গত বছরের ৩ অক্টোবর মধ্যরাতে আদালতের নির্দেশে বাসায় ফিরেছিল সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কে এস নবীর দুই নাতি।

এ ব্যাপারে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ পরদিন জানান, ধানমন্ডিতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কে এস নবীর রেখে যাওয়া চারতলা বাড়িতে ঢুকতে পারছিলেন না তার দুই নাতি কাজী আদিয়ান নবী ও কাজী নাহিয়ান নবী।

ভাতিজাদের বাবার বাড়িতে ঢুকতে দেননি বড় চাচা কাজী রেহান নবী। পরে ফুফু যোগাযোগ করেন থানায়। সেখানে সহযোগিতা পাননি। পরে একাত্তর টিভির এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। সেই অনুষ্ঠান দেখেই আদালতের আদেশ আসে।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা রাতেই কোর্টের আদেশ পেয়ে দুই শিশুকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছি। আদালতকেও এ বিষয়ে অবহিত করেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

এ বিভাগের আরো খবর