ঢাকার গণপরিবহন সমস্যা সমাধানে সাত বছর আগে যে ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তার অনেক কিছুই এখনও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। মেট্রোরেল প্রকল্প নেয়া হলেও তা সচল করার জন্য অন্যান্য পরিবহনসুবিধা কীভাবে কার্যকর হবে সেটি নির্ধারণ হয়নি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) গণশুনানিতে নগর বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।
শুনানিতে রাজধানীকেন্দ্রিক পরিবহন ও অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সমস্যার কথা উঠে আসে।
এতে অংশগ্রহণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, সড়ক পরিবহন বিভাগ, বিআরটিসি, রেলওয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তবে শুনানিতে ঢাকার দুই সিটির কোনো কর্মকর্তাকে কথা বলতে দেখা যায়নি।
এ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক শফিক-উর রহমান দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা সময় অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘রাজধানী ও তার আশপাশ নিয়ে সাত বছর আগে ডিটিসিএ যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা এখনও ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ঢাকাকে কেন্দ্র করে ডিটিসিএ ২০ বছর মেয়াদি যে পরিকল্পনা করেছিল, তার আলোকে অনেক কিছু শুরু হলেও শেষ হয়নি। আবার বিভিন্ন বড় প্রকল্প এসে ছোট প্রকল্পগুলোর কাজের সমন্বয়হীনতা তৈরি করেছে।’
শফিক-উর রহমান বলেন, ১৫ বছর আগে ডিটিসিএ যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, যেখানে কোনো সাবওয়ের কথা বলা হয়নি। তার মানে এটি হুট করে নেয়া হয়েছে। মেট্রোরেল কোন দিক দিয়ে চলবে সেটি ঠিক না করেই আর একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।
শুনানি শেষে শফিক-উর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শহরকেন্দ্রিক যে এসটিপি বা স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট পরিকল্পনা, সেটি আবার রিভাইজ করা হয়। এখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। প্রথম পাঁচ বছর কী করা দরকার, বা তার পরের পাঁচ বছরে কী করবে। এইগুলোতে বলা ছিল, লো কস্ট যেগুলো আছে যেমন ফুটপাত, সাইক্লিং, গণপরিবহন উন্নত করা- এগুলো কিছুই করা হয়নি। সেখানে মেট্রোরেল ছিল সর্বশেষ।’
তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা এর মধ্যে কাজ শুরু করেছে। এখন এটা সাংঘর্ষিক হচ্ছে। রুট যৌক্তিকীকরণ করার কথা থাকলেও সেটি এখনও শুরুই হয়নি। যেটি সবার আগে করতে হবে।
ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রকিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করছি। এ ক্ষেত্রে বুয়েট আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে অনেকভাবে। সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা সমাধান করতে চেষ্টা করব।’
শুরুতে রকিবুর রহমান রাজধানীতে চলমান ডিটিসিএ-এর বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। সেসব প্রকল্পে সমস্যা থাকলে তা কীভাবে সমন্বয় করা হবে, সে জন্য বিভিন্ন সংস্থার বক্তব্য জানার চেষ্টা করেন তিনি।
এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী রাস্তায় বিআরটিএর কাজ চলমান থাকায় যানজটের কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, কাজের কারণে রাস্তার পাশে ধুলা জমা হয়ে ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পানি জমে থাকে। তাছাড়া রাস্তায় খানাখন্দ থাকার কারণে গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে।
তবে রকিবুর রহমান জানান, এ ক্ষেত্রে সড়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এটি পর্যবেক্ষণ করবে।
এ সময় সড়কের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার বলেন, তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, পানি বের হওয়ার জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থায় খনন করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশন কোনো সহযোগিতা করেনি তাদের। বা কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছে না।
সাভার পৌরসভার নির্বাহী পরিচালক জানান, সিটি করপোরেশন ও সড়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে প্রকল্প নিয়ে সংঘর্ষ হচ্ছে। এমন অনেক প্রকল্প সড়ক নিয়েছে, যেটা সিটি করপোরেশন জানে না বা কাজের সময় সমস্যা তৈরি হয়।
অস্ট্রিয়া থেকে পরিকল্পনাবিদ গোলাম মোর্শেদ বলেন, পরিকল্পনা নেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট বিভাগকে যুক্ত করা উচিত। এ ছাড়া ড্রাইভারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় রেল বিভাগকে যুক্ত করা হয় না বলে অভিযোগ করেন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক মাসুদুর রহমান।
তিনি বলেন, রেলের বিস্তৃতি সারা দেশে হলেও ঢাকা শহরের মধ্যে অনেকগুলো লাইন রয়েছে, যা আশপাশের জেলাকে যুক্ত করেছে।
বিআরটিসি (অপারেশন)-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক শুকদেব ঢালী যাত্রী পরিবহনে ঢাকার রাস্তার সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
রুটভিত্তিক বাস চালু হলে বিআরটিসির জন্য তা সমস্যা হতে পারে বলে জানান রকিবুর রহমান।