দুই মাস ধরে কারাগারে আছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। জুলাই থেকে তার চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কারাগারে থেকেই ইয়ামিন যেন চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে অনুরোধ করেছেন তার মা হাসিনা বেগম ও বাবা রফিকুল ইসলাম মোল্লা।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ অনুরোধ জানান।
কারাবন্দি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়ার দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ৷ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেনের বাবা হাফেজ মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনও।
গত ৪ এপ্রিল গোয়েন্দা পুলিশ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা এবং সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ক্রীড়া সম্পাদক আরেফিন হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় শাহবাগ থানায় পুলিশের করা মামলার আসামি ছিলেন তারা।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত ২৫ মার্চ মতিঝিল থানায় ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদ একটি মিছিল বের করে। সেই মিছিলে পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও পুলিশকে মারধর করার ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের সময় আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। আটক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পুলিশ চিকিৎসা দিতে নিয়ে গেলে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের কর্মীরা তাকে জোরপূর্বক পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন পল্টন মডেল থানার এসআই রায়হান কবির। এ মামলার আসামি হিসেবে ইয়ামিনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাইকোর্ট তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে দেয় গত ১ জুন।
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে বিন ইয়ামিনের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘দুই মাস ধরে ছেলের জন্য ঢাকায় আসছি এবং যাচ্ছি। উপাচার্যের কাছে অনুরোধ করব, কারাগারে থেকে হলেও আমার ছেলেদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ করে দিন, আমাদের প্রতি একটু দয়া করুন। একটু চেষ্টা করুন, যেন তাদেরকে মুক্ত করে দেয়া হয়।’
বিন ইয়ামিনের বাবা রফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘মোদি বিরোধী আন্দোলনের কারণে আমার ছেলেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্রের রাজনীতি করার অধিকার আছে। এটি সাংবিধানিক আইন। তাই বলে এ শিক্ষার্থীদের জেলখানায় আটকে রেখে তাদের মেধাশূন্য করে দিতে হবে? সর্বশেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো দিতে না পারলে তাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।’
আকরাম হোসেনের বাবা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি ছয় বছর ধরে ঈদের নামাজ পড়াই। কিন্তু আমার ছেলে আকরাম গ্রেপ্তার হওয়ায় ঈদের নামাজও পড়াতে পারিনি। আমার ছেলেকে যখন কোর্টে আনা হয়েছে, তখন আমি ছেলেকে সালাম দিলাম। সেই সালামের উত্তর পর্যন্ত গ্রহণ করতে আমাকে সুযোগ দেয়নি। এটি রাজনীতি না, প্রতিহিংসা।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে আটক শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন। অভিভাবকদের কাছ থেকে উপাচার্য স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের অনুমতি পেলে কারাগারে পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ আছে। আমি তাদের বুঝিয়ে বলেছি। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সবকিছু করা হবে। আমাদের তরফ থেকে সহযোগিতার কোনো ঘাটতি থাকবে না।’