‘বকশিশ আর টিপস দিয়ে নির্ধারণ করা হয় আমাদের মজুরি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক। মনে হয়, এ যেন বকশিশনির্ভর শিল্প।’
আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক রাশেদুর রহমান।
করোনাকালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে উঠে এসেছে পর্যটন। দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয় পর্যটন স্পটগুলো।
এমন অবস্থায় নিজেদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলনে করোনাকালে পর্যটন খাতের বিপর্যয় তুলে ধরে শনিবার আলাদা মন্ত্রণালয় গঠনসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন।
প্রস্তাবিত বাজেটে পর্যটন খাতের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থকে অপ্রতুল মনে করে তা বাড়ানোর দাবিও জানানো হয়।
রাশেদুর রহমান বলেন, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইনস, পর্যটক পরিবহন, ক্রুজিং, ট্যুর গাইড, বিচ হর্স রাইডার, বিচ ফটোগ্রাফার সার্ফিং অ্যাসিস্টেন্ট, বিচ রাইডার, ঝিনুকের কারুপণ্য বিক্রেতাসহ পর্যটন খাতের সাথে যুক্ত ১২টি উপখাতের ১১৯ ধরনের কাজের কর্মী ও ছোট-বড় ব্যবসায়ীর জীবন-জীবিকা।
পর্যটনকে আলাদা মন্ত্রণালয় করার দাবি জানিয়েছে খাতসংশ্লিষ্টরা। ছবি: নিউজবাংলা
পর্যটনশিল্পের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে পর্যটনের একটি উপখাত পর্যটন পরিবহনের অংশ বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নামে বরাদ্দের ৮০ শতাংশের বেশি খরচ করা হয় বিমান রক্ষণাবেক্ষণে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ও উন্নয়ন খাতে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঘোষিত সাধারণ ছুটি আর বিধিনিষেধের ফলে ২০২০ সালে বাংলাদেশের পর্যটন খাত প্রায় ৫ মাস সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল, বাকি ৫ মাস চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
সংগঠনটির নেতারা বলছেন, পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই সময়ে বরাদ্দকৃত বাজেটের ২ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু সে অর্থ বিমান আর পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ছাড়া বাংলাদেশের পর্যটনের উন্নয়নে কোথায় ব্যয় হয়েছে তা পর্যটনসংশ্লিষ্টদের কাছে দৃশ্যমান নয়।
পর্যটনশিল্প-সংশ্লিষ্ট কোনো খাতের বিনিয়োগকারী, কিংবা শ্রমিক-কর্মচারী কেউ এক টাকাও সহায়তা পাননি বলে জানান সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন।
তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেট বরাদ্দে পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত প্রায় ৪০ লাখ দক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী যারা প্রায় বছরব্যাপী কর্মহীন হয়ে, বেতন ছাড়া বাধ্যতামূলক ছুটিতে থেকে উপার্জনহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
লিপন বলেন, ‘১৯৯৯ সালে পর্যটনকে আবশ্যকীয় শিল্প বলে উল্লেখ করা হলেও করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রায় সোয়া ১ লাখ কোটি টাকার প্যাকেজে পর্যটন খাতের স্থান হয়নি। বিমান মন্ত্রণালয় বিমানের ঘাটতি পূরণে বাজেট থেকে বরাদ্দ নিতে যে পরিমাণ ব্যস্ত থাকে, সে তুলনায় পর্যটনের বাকি খাতগুলো থাকে উপেক্ষিত।’
সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া সাতটি দাবি হলো-
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে পর্যটনের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা।
পর্যটন খাতের শ্রমিক-কর্মচারীদের শ্রম অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান শ্রম আইনের শিল্প তালিকায় উপঘাতসহ পর্যটনশিল্পকে যুক্ত করা এবং পর্যটন খাতে শ্রম আইনের বাস্তবায়ন করা।
পর্যটনকেন্দ্রিক জেলাসমূহে শ্রম আদালত, শ্রম পরিচালক ও শ্রম পরিদর্শকের দপ্তর চালু করা। মজুরি কাঠামো এবং বাজারমূল্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে মজুরি পুনর্নির্ধারণের পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করা।
পর্যটন খাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে হোটেল-রেস্তোরাঁ আইন ২০১৪-এর বাস্তবায়ন এবং বিদেশি বা স্বজনপ্রীতি নয়, পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বাংলাদেশিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রধিকার দেয়া।
করোনায় চরমভাবে বিপর্যস্ত পর্যটন খাতের পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় প্রণোদনা এবং পর্যটন শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দিতে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ দেয়া।
করোনার টিকা প্রদানে সরাসরি পণ্য এবং সেবা উৎপাদনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া।
যেকোনো দুর্যোগে পর্যটনশিল্প ও শ্রমিকদের সুরক্ষা এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের অবসরকালীন নিরাপত্তায় ভবিষ্য তহবিল গঠন করা। রাষ্ট্রের সকল অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় পর্যটন বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা।