টিকটক চক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিন পর পালিয়ে দেশে ফিরে এক তরুণীর মামলায় গ্রেপ্তার আরও দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম মামুনুর রশীদ এই রিমান্ড আদেশ দেন। আসামি দুজন হলেন আমিরুল ইসলাম ও আবদুস সালাম মোল্লা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মহিউদ্দিন ফারুক আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে নিতে আবেদন করেন।
এ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরণ। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
আসামিদের কিছু বলার আছে কি না, জানতে চান বিচারক। তখন আসামি আমিরুল বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাই। গত সোমবার বিকেলে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার মোবাইলে একটা ফোন আসে। মোটরসাইকেল ভাড়া নেবে বলে বাজার থেকে আমার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দেয়। আমাকে বাজারে আসতে বলে। আমি বাজারে যাই। এরপর আমাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি অফিসে নিয়ে আসে।’
তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারে সাতজন লোক। আমরা খুবই গরিব। আমার বাবা ভ্যান চালায়। আমি ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না।’
মামলাটির ১২ আসামির মধ্যে দেশে অবস্থান করা পাঁচজনকেই জিজ্ঞাসাবাদে রিমান্ডে পেল পুলিশ। গত ৩ জুন মামলাটির এজাহারনামীয় তিন আসামি মেহেদি হাসান, মহিউদ্দিন ও আবদুল কাদেরকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
ভারতে পাচার হওয়ার ৭৭ দিনের নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে সম্প্রতি পালিয়ে দেশে ফিরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় গত ১ জুন মামলা দায়ের করেন এক তরুণী। মামলায় মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ভিকটিমের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, ২০১৯ সালে হাতিরঝিলে মধুবাগ ব্রিজে মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হৃদয় বাবুর সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় বাউল লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে ভিকটিমকে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করেন হৃদয় বাবু। পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ার পর থেকে পালিয়ে দেশে ফেরা পর্যন্ত তার রোমহর্ষক করুণ কাহিনি কল্পনাকেও হার মানিয়েছে।
ভুক্তভোগী তরুণীর বরাতে পুলিশ জানায়, ভারতে পাচারের পর ভিকটিমকে বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় রাখা হয়। এ সময় ওই তরুণী ভারতে পাচার হওয়া আরও কয়েকজন বাংলাদেশি ভিকটিমকে দেখতে পান। যাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পারলারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছে।