বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাবে রাজধানী

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ০৮:৪৬

গত বছরের শেষে ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তখন বলা হয়েছিল, খালগুলো পরিষ্কার করা হলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না। গত পাঁচ মাসে এ নিয়ে কাজ করেছে দুই সিটি করপোরেশন। তবে বর্ষার আগেই মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের রাস্তা।

তিন ঘণ্টা ধরে বৃষ্টি হলে রাজধানীতে বড় ধরনের জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন নগরবিদরা। মঙ্গলবার সকালে টানা তিন ঘণ্টার বৃষ্টির পর নগরের জলাবদ্ধতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠে এসেছে।

নগরবিদরা জানিয়েছেন, টানা দুই থেকে তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে হাঁটুপানির নিচে থাকবে রাজধানী। ঢাকায় এখন যে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তাতে দুই ঘণ্টার বৃষ্টির পানি বের করে দেয়ার সক্ষমতা নেই।

তবে ঢাকায় মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে পানি জমে থাকাকে জলাবদ্ধতা বলতে রাজি নন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলাবদ্ধতার কোনো সংজ্ঞা নেই। ঢাকায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।

গত বছরের শেষে ওয়াসা থেকে খালগুলো বুঝে নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তখন বলা হয়েছিল, খালগুলো পরিষ্কার করা হলে ঢাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না। গত পাঁচ মাসে এ নিয়ে কাজ করেছে দুই সিটি করপোরেশন। তবে বর্ষার আগেই বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের রাস্তা।

জলাবদ্ধতার কারণ

নিউজবাংলা থেকে জানার চেষ্টা করা হয়েছে ঢাকায় কেন জলাবদ্ধতা হয় বা এর কারণ কী।

শনিবারের আকস্মিক বৃষ্টিপাত নিয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, সাধারণত ১০০ মিলিমিটারের নিচে যদি বৃষ্টি হয়, আর তার ফলে জল জমে থাকাকে জলজোয়ার বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ১০০ মিলিমিটারের উপরের দুই থেকে তিন ঘণ্টা টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে।

গত মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে পানিতে ডুবে যায় রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা। ফাইল ছবি

সিটি করপোরেশনগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ইকবাল হাবিব।

তিনি বলেন, এমন টানা বৃষ্টি হলে সেই পানি বের করে দেয়ার মতো সক্ষমতা বর্তমান দুই সিটির ড্রেনেজ পদ্ধতিতে নেই। এর থেকে বেশি বৃষ্টি হলে পুরো ড্রেনব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে নতুন করে ড্রেন প্রসারিত করতে হবে, যেটি এই মুহূর্তে সম্ভব না।

দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার কারণ কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এর আগে কেউ এ ধরনের উদ্যোগ নেয়নি। নগরবাসী প্রতারিত হয়েছে। প্রকল্প নেয়া হলেও তা খণ্ডিতভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে জনসংযোগ না থাকায় কাজ শেষে জনগণের স্বার্থে কিছুই হয়নি।

একই রকম কথা জানালেন আরেক নগরবিদ আখতার মাহমুদ।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে জলাবদ্ধতার কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে জল নিষ্কাশনের জন্য সময় ও বৃষ্টির পরিমাণটা বড় বিষয়।

‘মাত্র তিন ঘণ্টায় যদি ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তবে ঢাকা শহরের যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা আছে, সেই পানি সঙ্গে সঙ্গে অপসারণের অবস্থা নেই। সে রকম ড্রেনেজ ক্যাপাসিটি এই মুহূর্তে নেই।’

দুইটি সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মূলত জলনিষ্কাশন ও কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন বেশি জরুরি। সেটি অবশ্য সিটি করপোরেশনের দায়। আজকে অনেকগুলো পকেট জায়গাতে পানি জমে ছিল। আর এর কারণ ড্রেনগুলো বন্ধ থাকে। ফলে পানি খালে গিয়ে পৌঁছাতে পারে না। যদি তারা এটি পরিষ্কার করতে পারে, তবে পানি সহজে নেমে যাবে। মূলত নালাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।’

খালগুলো নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকাতে যে খাল ও ড্রেন আছে তা অপরিষ্কার থাকার কারণে বৃষ্টির পানি খালে যেতে দেরি হয়। অনেক বেশি পানি হলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সিটি করপোরেশনের এই খালগুলো পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব। তাদের কাজ হবে দুইটি। জলাবদ্ধতা নিরসন ও কঠিন বর্জ্য সরানো। এটি যদি সময়মতো করা হয়, তবে অনেক বেশি পানি না হলে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে না।

ঢাকার খালগুলোর কী অবস্থা

গত বছর ঢাকার খালগুলো নিয়ে গবেষণা করেছে গবেষণা সংস্থা রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার। তাদের দুটি জরিপে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতারকালেও ঢাকা জেলায় নদীর সংখ্যা ছিল ১৫। ঢাকা মহানগরী এলাকায় খাল ছিল ৭৫টি। এর মধ্যে আঁটি, কনাই, দোলাই, পান্ডো ও নড়াই নদীর কোনো হদিস বর্তমানে পাওয়া যায় না।

ঢাকাকে ঘিরে রাখা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও টঙ্গী নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী ১৭টি খালও হারিয়ে গেছে। গত ৫০ বছরে এসব নদী ও খালের বুকের ওপর গড়ে উঠেছে বড় বড় অট্টালিকা।

বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি পেতে যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতার প্রথম কারণ অপরিকল্পিতভাবে ঢাকার ওয়েট ল্যান্ডগুলো (জলাভূমি) ভরাট করা হয়। যতগুলো হাউজিং করা হয়েছে এর কোনোটাই ওয়াটার মডেলিং করা হয়নি। এটি না করার কারণে পানির জায়গাটা ভরাট হয়ে গিয়েছে।’

নতুন নতুন হাউজিং প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে এই গবেষক বলেন, ‘সরকারি ও বেসরকারি হাউজিংগুলো ওয়েট ল্যান্ড ও খাল দখল করে করা হয়েছে। ঢাকার খালগুলো এখন অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। বাকি যেগুলো আছে তার ৭০ ভাগ দখল হয়ে আছে। বৃষ্টির পানি খালে যেতে না পারার কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে।’

খাল উদ্ধারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনই দ্রুত খাল দখলমুক্ত করতে ডিমার্কেশন প্লান দিতে হবে। তা না হলে ঢাকাতে বসবাস করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। খালগুলো বক্স কালভার্ট করা হয়েছে, যার ফলে সেখানে বোতল ও পলিথিন জমে পানি আটকে থাকে।’

জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে গত বছর ঢাকা ওয়াসা শহরের ২৬টি খাল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) এবং প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার বড় আকারের নালা ও চারটি পাম্প স্টেশন দুই সিটিকে বুঝিয়ে দিয়েছে। আগে থেকেই দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ২ হাজার ২১১ কিলোমিটার নালা দেখাশোনা করে আসছে।

কী বলছে কর্তৃপক্ষ

গত শনিবারের জলাবদ্ধতার পর ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসার কাছ থেকে খালগুলোর দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর ২ জানুয়ারি থেকে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর, কালুনগর খালসহ এগুলোর শাখা-প্রশাখা এবং পান্থপথ ও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে আমরা বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেছি।’

মেয়র বলেন, ‘ইতোমধ্যে এসব খাল ও বক্স কালভার্ট থেকে আমরা ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের বেশি বর্জ্য ও ৬ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন পলি অপসারণ করেছি। এ ছাড়া ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পাওয়া অচল দুটি পাম্প স্টেশনের তিনটি পাম্প মেশিন সচল করতে সক্ষম হয়েছি এবং বাকি তিনটি সচল করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া ওয়াসার কাছ থেকে পাওয়া বদ্ধ নর্দমা ও আমাদের উন্মুক্ত নর্দমাগুলো পরিষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে এবং এই জুনের মধ্যেই তা শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।’

মেয়র বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রমের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেটগুলো দ্রুত আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হোক। তা এখনও হয়নি। এ ছাড়া ডিএনডি বাঁধ, হাতিরঝিল প্রকল্প, মেট্রোরেলের কার্যক্রমের ফলে জলাবদ্ধতার সম্পূর্ণ সমাধান এখন পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব না হলেও অতীতের মতো ঢাকাবাসীকে কোথাও কোমরপানি বা গলাপানিতে নাজেহাল হতে হয়নি।’

এ সময় তাপস জলাবদ্ধতার সংজ্ঞা হিসেবে বলেন, ‘সাধারণত কোনো স্থানে তিন ঘণ্টার বেশি পানি জমে থাকাকে জলাবদ্ধতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়। আজকের বৃষ্টিতে আমরা তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রায় শতভাগ পানি নিষ্কাশন করতে সক্ষম হয়েছি।’

জলাবদ্ধতা নিয়ে নিউজবাংলার পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তাকে মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো জবাব আসেনি।

এ বিভাগের আরো খবর