ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) আর কোনো দালালি-দখলবাজির সুযোগ হবে না বলে জানিয়েছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার দুপুরে নগর ভবনের ব্যাংক ফ্লোরে করপোরেশনের তেলেগু সম্প্রদায়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মধ্যে ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’-এর বরাদ্দপত্র ও চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি।
মেয়র তাপস বলেন, ‘তেলেগু সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাসের চাবি হস্তান্তরের মাধ্যমে আজ থেকে দালাল চক্রের অবসান ঘটল।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এখন থেকে আর দালালি করার সুযোগ পাওয়া যাবে না। যারা ন্যায্য দাবিদার, যারা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মরত পরিচ্ছন্নকর্মী, তারাই এ বাসার হকদার। তারাই এ বাসাগুলো পাবে। কোনো হকদার যেন বঞ্চিত না হয়, আমরা সেটা নিশ্চিত করব।’
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘এ রকম উদাহরণ আছে, বাসা বরাদ্দ পায় একজন, গিয়ে দখল করে আরেকজন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এখন থেকে আর কোনো দখলবাজি চলবে না। যারা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মরত শুধু তারাই বাসা পাবে।’
গৃহ ছাড়া যেন কেউ না থাকে সেটাই মুজিববর্ষের অঙ্গীকার উল্লেখ করে শেখ তাপস বলেন, ‘আপনাদের একটি বিষয় উপলব্ধি করতে হবে, যেকোনো সংস্থা বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান যখন আবাসনের ব্যবস্থা নেয় বা উদ্যোগ গ্রহণ করে, প্রাধিকার কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।
‘পরবর্তীতে অন্যান্য কর্মকর্তা, তারপরে আসেন কর্মচারীরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের অবহেলিত তেলেগু, হরিজন, দলিত সম্প্রদায়কে আগে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই উদ্যোগ সিটি করপোরেশন নিয়েছে।’
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য আলাদা আলাদা সম্প্রদায়ভিত্তিক আবাসনের ব্যবস্থা যেমন করা হবে, তেমনি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান মেয়র তাপস। বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর আবাসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করছে।’
এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনেক জায়গা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা দখল করে রেখেছেন।
শেখ তাপস বলেন, ‘আমরা সেগুলো দখলমুক্ত করার কার্যক্রম গ্রহণ করব। যারা উত্তর সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন, তাদের উত্তর সিটি করপোরেশনের জায়গায় চলে যেতে হবে। যারা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন কেবল তারাই দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’
অনুষ্ঠানে মঙ্গলবারের জলজট প্রসঙ্গেও কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে যেসব স্থানে জলজটের সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে গতবারের চেয়ে কম জলাবদ্ধতা হয়েছে। তারপরও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি, আগামীতে যেন এসব স্থান থেকে দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন করা যায়।
‘আমরা আশাবাদী অচিরেই জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান হবে। আমাদের লক্ষ্য সাধারণ মাত্রার বৃষ্টিপাত হলে, ঢাকা শহরে যেন পানি না জমে। অতি ভারী মাত্রার বৃষ্টিপাত হলে যেন তিন ঘণ্টার মধ্যে, ভারী বৃষ্টিপাত হলে যেন দুই ঘণ্টার মধ্যে এবং মাঝারি ভারী বৃষ্টি হলে যেন এক ঘণ্টার মধ্যেই পানি নিষ্কাশন হয়ে যায়, সেইভাবে আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করছি।’
অনুষ্ঠানে মেয়র তাপস ঢাকাবাসীকে উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য না ফেলার আহ্বান জানান।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজি মনিরুল ইসলাম, ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদল সরদার ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর লাভলী চৌধুরী।
সেখানে সভা শেষে মেয়র তাপস তেলেগু সম্প্রদায়ের ৯৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মাঝে ‘শিমুল’ ও ‘মুকুল’ নামের পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাসের বরাদ্দপত্র ও চাবি হস্তান্তর করেন।