বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডা. সাবিরা হত্যা: ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ

  •    
  • ১ জুন, ২০২১ ২০:১৫

‘মরদেহটি প্রাথমিক পরীক্ষা করেই বোঝা গেছে, রোববার মাঝরাতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। সকালে বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল হত্যাকারী, যেন হত্যাকে অগ্নিদুর্ঘটনায় রূপ দেয়া যায়। তাই হত্যাকারী বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজার লক চেপে পালিয়ে যায়। কিন্তু আগুন লাগাতে কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার না করায় বিছানায় আগুন কিছুটা জ্বলে আবার নিভে যায়। তাই মরদেহের কিছু অংশ পুড়ে গেলেও অক্ষত ছিল। এতে আমরা পরিষ্কার ধারণা পেয়েছি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারী ঠাণ্ডা মাথায় এ কাজ করেছে।’

রাজধানীর কলাবাগানের বাসায় গ্রিন লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমানকে কারা, কেন খুন করেছে, এ বিষয়ে কোনো ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় স্বজনদের পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়নি। তবে খুনিদের শনাক্ত করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

সোমবার দুপুরে চিকিৎসক সাবিরার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতে তিনি বাসায় একাই ছিলেন। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সময় সাবিরার গলা ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে তার মুখমণ্ডল ও শরীরের কিছু অংশ আগুনে পোড়ানো ছিল।

সাবিরার মরদেহটি বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে ছিল, বিছানার কিছু অংশও ছিল পোড়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক টিমের সন্দেহ, সাবিরাকে রোববার মধ্যরাতে হত্যা করা হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সোমবার সকালে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল।

হত্যার রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে কলাবাগান থানার পুলিশ, ডিবি ও পিবিআই। কিন্তু মঙ্গলবার পর্যন্ত সাবেরা হত্যার কোনো ক্লু পায়নি তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, নিহতের পরিবারের কোনো সদস্য কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না। পরিবারে কারও সঙ্গে চিকিৎসকের কোনো বিবাদের বিষয়ও সামনে আসছে না। বাসা থেকে কিছু খোয়া যাওয়ার বিষয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে ওই বাসায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও ছিল না। সব মিলিয়ে হত্যাকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্লু বা মোটিভ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এই হত্যার তদন্তে আমাদের বেগ পেতে হবে।’

ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মহানগর উত্তর বিভাগ। কোনো ধরনের ক্লু না পাওয়ার তথ্য আসে সেখান থেকেও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মরদেহটি প্রাথমিক পরীক্ষা করেই বোঝা গেছে, রোববার মাঝরাতে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়। সকালে বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিল হত্যাকারী, যেন হত্যাকে অগ্নিদুর্ঘটনায় রূপ দেয়া যায়।

‘তাই হত্যাকারী বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজার লক চেপে পালিয়ে যায়। কিন্তু আগুন লাগাতে কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার না করায় বিছানায় আগুন কিছুটা জ্বলে আবার নিভে যায়। তাই মরদেহের কিছু অংশ পুড়ে গেলেও অক্ষত ছিল। এতে আমরা পরিষ্কার ধারণা পেয়েছি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারী ঠাণ্ডা মাথায় এ কাজ করেছে। কিন্তু প্রথামিকভাবে কে, কেন এ কাজ করল তার উত্তর পাচ্ছি না।’

তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও নিহতের কোনো স্বজন অভিযোগ নিয়ে আমাদের থানায় আসেননি। তারা বলেছেন, মরদেহ দাফনের পর মামলা করবেন।

‘তারা যে অভিযোগই দেবে, আমরা সেটা গ্রহণ করব। আমরা মামলার জন্য অপেক্ষা না করে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু জটিল বিষয় আছে, সেটা তদন্তের স্বার্থে বলা যাচ্ছে না। তবে সিআইডির ক্রাইম সিনসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের কিছু তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে পারব।’

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা আশা করছেন, ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট হত্যাকারী পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

তারা জানান, ঘটনার পর সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ নানান আলামত সংগ্রহ করেছে। সেখানে কয়েকটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা বিশেষ নজর দিচ্ছে চিকিৎসক সাবেরার রুমের দরজার ভেতরের দিকের নবটিতে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্টের ওপর। কারণ হত্যার সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তারা ডোরনবের লক চেপে দরজা বন্ধ করে গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জন ডিবি হেফাজতে

তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগরের রমনা ডিবির উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। এ ছাড়া সন্দেহের তালিকায় আরও অনেককেই রাখা হয়েছে। আমরা ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাব। তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে এর বেশি এখন বলা যাবে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাবিরার বাসায় সাবলেট থাকা একজন তরুণী ও তার দুই বন্ধু, সাবিরার বাসার খণ্ডকালীন গৃহকর্মী এবং ওই বাসার দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

‘মঙ্গলবার সকালে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কার অবস্থান কোথায় ছিল এবং তারা কখন কার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারা কী কী করেছেন, প্রতিটি পদক্ষেপের বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা সেগুলো লিখিত আকারে দেবেন। এরপর তাদের বর্ণনা মিলিয়ে দেখবেন গোয়েন্দারা। সেটা যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

গলা কেটে হত্যার প্রমাণ ময়নাতদন্তে

ধারালো অস্ত্র দিয়ে শ্বাসনালি কেটে ফেলায় সাবিরার মৃত্যু হয়েছে বলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছে।

মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে সাবিরার মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী ময়নাতদন্ত শেষে মর্গ থেকে বেরিয়ে আসেন ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মাকসুদ। কিন্তু তিনি ময়নাতদন্তের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।

পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরেনসিক বিভাগের আরেক চিকিৎসক নিউজবাংলাকে জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ওই চিকিৎসকের (সাবেরা) শ্বাসনালি কাটা হয়েছে। এতেই তার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া তার শরীরে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত পাওয়া গেছে।

তিনি আরও জানান, তার মৃত্যুর সম্ভাব্য সময় রোববার রাত। পরদিন সোমবার তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট ও কেমিক্যাল অ্যানালাইসিসের জন্য মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর