কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। প্রবাদ বচনের কথার বাস্তবতা মঙ্গলবার দেখেছে রাজধানীবাসী।
গরমের হাঁসফাঁস থেকে বাঁচতে নগরবাসীর বৃষ্টির প্রত্যাশা একেবারে হাঁটুপানিতে মিশেছে। গত কয়েক দিন তাপমাত্রার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা বৃষ্টির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টার বর্ষণে রাজধানীতে ডুবে গেছে অনেক এলাকা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এ বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ঢাকায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত অবশ্য এবার হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সেখানে রেকর্ড হয়েছে এক দিনে ১০৩ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন অবস্থা আরও এক থেকে দুই দিন থাকবে। মৌসুমি বায়ুর এখনও প্রবেশ ঘটেনি। তবে টেকনাফ উপকূলে মৌসুমি বায়ু ও পূবালী বাতাসের সংযোগে এই বৃষ্টি। এটাকে সরাসরি মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বলা যাবে না। সেটি আসতে আরও কিছুদিন দেরি হবে।’
নগরের এই স্বস্তির বৃষ্টি অস্বস্তিতে পরিণত করেছে রাজধানীবাসীকে। ঘুম ভেঙে বাড়ির দোরগোড়ায় হাঁটুপানি নিয়ে কাজে যেতে হয়েছে।
ভোর থেকেই রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘলা। একটু পর পর মেঘের গর্জন শোনা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শুরু হয় বৃষ্টি।
রাজধানীতে এ বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে মঙ্গলবার। বিভিন্ন এলাকার সড়কে জমেছে হাটুপানি। অফিসগামী লোকেরা পড়েছে বিপাকে । ছবিটি মিরপুর ১০ নম্বর রোড থেকে তুলেছেন সাইফুল ইসলাম।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিউজবাংলার প্রতিবেদকরা জানান, সকাল থেকে বৃষ্টির ফলে অনেক এলাকায় নেমে এসেছে দুর্ভোগ। একদিকে মুষলধারে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তি হয় চরম। মূল সড়কের চেয়ে অলিগলিতে জলাবদ্ধতার পরিমাণ ছিল বেশি।
রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, ধানমন্ডি, পুরান ঢাকা, নিকুঞ্জ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মহাখালী, কারওয়ান বাজারসহ বেশির ভাগ এলাকার অলিগলি-সড়ক এখনও পানির নিচে।
এ ছাড়া মিরপুর, কল্যাণপুর, কুড়িল, গুলিস্তান, বাড্ডা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকতে দেখা যায়।
সারা দিন এমন আবহাওয়া থাকলে তা আরও চরম পর্যায়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামীরা। অনেকেই নিজ নিজ এলাকার দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
রাজধানীর মহাখালী এলাকায় পানির দুর্ভোগের কথা জানিয়ে একজন লিখেন, ‘একটু বৃষ্টিতেই কুপোকাত ঢাকা। আর বৃষ্টি চাই না। গরমই ভালো।’
বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি পেতে যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ। ছবি: সাইফুল ইসলামকারওয়ানবাজার এলাকায় অফিসগামী এক ব্যক্তি বলেন, ‘দুই ঘণ্টার বৃষ্টি সামাল দিতে পারে না ঢাকা। আর সেখানে মেট্রোরেলসহ এত প্রকল্প কীভাবে সামলাবে?’
বৃষ্টির দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন পুরান ঢাকায় বসবাসকারী অনেকেই। চানখাঁরপুল, নাজিমুদ্দিন রোডসহ অনেক এলাকা হাঁটুপানির নিচে।
নিকুঞ্জের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘জানালা দিয়ে যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি।’
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা নুর আলি শাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাঁটুপানি ভেঙে অফিসে যাচ্ছি। অফিস ইস্কাটনে। ফেসবুকে দেখলাম কারওয়ানবাজারে পানি জমেছে। সিএনজি নিতেও ভয় হয়। মাঝরাস্তায় না বন্ধ হয়ে যায়।’
মালিবাগের বাসিন্দা আরাফাত ফেরদৌস বলেন, ‘ঢাকায় বৃষ্টি চাই না। এমন বৃষ্টিতে দুর্ভোগের শেষ নেই। রিকশা নাই, সিএনজি নাই। কীভাবে অফিসে যাব?’
মৌচাক-মালিবাগ এলাকায় পানির কারণে যান চলাচলে স্থবিরতা এসেছে। সিএনজিসহ ছোট যানগুলোতে পানি ঢুকে বিকল হয়ে থাকতে দেখা গেছে। গর্তে ভরা বেশির ভাগ রাস্তা ডুবে থাকায় অনেক গাড়িও বিকল হয়ে যায়।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা হাসিব মেহেদী বলেন, ‘ঘণ্টা দুই ধরে মানুষের ভোগান্তি দেখছি। আমিও ওই দলে আছি।’
রাজধানীর কালশীতে সড়ক থেকে বৃষ্টির পানি নামাতে কাজ করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। ছবি: সাইফুল ইসলামতাদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতা ছাড়া নগরের দুই সিটি করপোরেশন আর কিছুই দিতে পারেনি। বারবার অভিযোগ বা সংবাদ প্রকাশ হলেও তা তাদের প্রকল্পের আওতায় রয়ে গিয়েছে।
এ বছরের শুরুতে ঢাকার খালগুলো পুনরুদ্ধারে নামে ঢাকা সিটি করপোরেশন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, খাল পরিষ্কার করা হলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা থাকবে না।
সে অনুযায়ী নেয়া হয় ব্যবস্থা। তবে তার সুফল এখনও পায়নি নগরবাসী। এক দিনের বৃষ্টিতেই নাকাল হয়েছে ঢাকা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর ফলে আরও এক-দুই দিন এমন অবস্থা থাকবে।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় জমে থাকা পানির মধ্যেই চলছে গাড়ি। ছবি: সাইফুল ইসলামআবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় অবস্থান করছে। ফলে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।