তরুণদের উদ্দেশে উগ্রবাদী বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ স্বীকার করে আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আমির হামজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার হামজাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসির পুলিশ পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান।
আমির হামজা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন এ তদন্ত কর্মকর্তা।
জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আমির হামজার উগ্রবাদী বক্তব্য উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্প্রতি দুই তরুণ জাতীয় সংসদে খোলা তলোয়ার নিয়ে হামলার পরিকল্পনা করেন অভিযোগ উঠেছে। সেই দুই তরুণই গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে আছেন।
শেরেবাংলা নগর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমির হামজা তার দেয়া উগ্রবাদি বক্তব্যে তরুণ সমাজকে ইসলামি বিপ্লবের দিকে আকর্ষণ করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।’
গত ২৫ মে শেরেবাংলা নগর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আমির হামজাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। এর আগে গত ৫ মে খোলা তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টারত সাকিব নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সাকিবকে আটকের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় সাকিবসহ আলী হাসান উসামা ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে আসামি করা হয়।
সিটিটিসি জানায়, সাকিব মোবাইল ফোনে উগ্রবাদ বার্তা সংবলিত ভিডিও প্রচারকারী আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদী জিহাদি হামলার বার্তা সংবলিত ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আসক্ত হন।
ওই এজাহারে মুফতি আমির হামজার নাম ছিল।
তার সূত্রে ধরেই ২৪ মে বিকেলে কুষ্টিয়া থেকে আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
এর আগে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আলী হাসান ওসামা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
মুফতি আমির হামজা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের রিয়াজ সর্দারের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসীর পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কে এই আমির হামজা
পুলিশের দাবি, আমির হামজা ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে অবমুক্ত তার বেশ কিছু বক্তব্য উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। যা শুনে কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজকারী আমির হামজার জন্ম ১৯৯১ সালে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আল-কোরআনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি।
আমির হামজা যখন ওয়াজ শুরু করেন, তখন তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন, ‘আমি ভার্সিটির মাল’।
তবে ওয়াজিয়দের একাংশ আবার এ নিয়ে তাকে আক্রমণ করার পর তিনি আর সে পরিচয় দেননি।
গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর আমির হামজা ক্রমাগতভাবে মাস্ক না পরতে উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন। বলেছেন, করোনা এসেছে ইসলামে অবিশ্বাসীদের শায়েস্তা করতে।
তিনি এমনও বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কারও করোনা হবে না।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায় আমির হামজা বলেন, ‘আমি কসম দিচ্ছি আপনার কাছে করোনা আসবে না। যদি আসে আমার কাছ থেকে বুঝে নিয়েন যান। যদি আসে তাহলে কোরআন শরিফ মিথ্যা হয়ে যাবে। আল্লাহ কি তার কোরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করবেন?’
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলে হামজা তার মতো করে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই বক্তব্যের আগে পরে তিনি আরও অনেক কিছু বলেছেন। সেগুলো প্রচার না হওয়ায় তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।