বাংলাদেশ জাতীয় হকি টিমের খেলোয়াড় ইকবাল নাদির প্রিন্স। হঠাৎ একদিন প্রিন্স ও তার বাবাকে ফোন করেন এক ব্যক্তি। অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কর্মকর্তা দাবি করে নিজের নাম জানান খন্দকার লতিফুল হক।
দায়িত্ব পালন করছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক হিসেবে। তিনি জানান, প্রিন্সের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
সেই কর্মকর্তা পরিচয়দানকারীর সঙ্গে দেখা করে তার অপরাধ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সম্পর্কে জানতে চান প্রিন্স। তখন তাকে ঢাকা অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-৫ আদালতের একটি এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখান সে কর্মকর্তা।
প্রিন্স পরোয়ানা দেখে বুঝতে পারেন তার পরিবারের একজন সদস্যের সঙ্গে পুরোনো ঝামেলার ধারাবাহিকতায় এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। তবে প্রিন্স চাইলে গ্রেপ্তার এড়াতে পারেন, সে জন্য তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে।
জাতীয় দলের খেলোয়াড় ও সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে টাকা দিয়ে রফাদফা করেন প্রিন্স।
কিন্তু কয়েক দিন পর আবারও একই কারণে আরও টাকা দাবি করেন সিআইডির পরিচয় দেয়া ওই কর্মকর্তা।
তখন সন্দেহ হলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিআইডির দারস্থ হন প্রিন্স। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন খন্দকার লতিফুল হক নামে কোনো কর্মকর্তা তাদের নেই। তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাটি ভুয়া। প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন বুঝতে পারেন প্রিন্স।
প্রিন্সের অভিযোগের পর ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ সিআইডির একটি বিশেষ দল সিআইডি পুলিশ ইন্সপেক্টর পরিচয় দেয়া খন্দকার লতিফুল হককে ধরতে কাজ শুরু করে।
রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে রোববার বিকেলে লতিফুলকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সে সময় তার কাছ থেকে বেশ কিছু ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
প্রতারক লতিফুল হককে গ্রেপ্তারের অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিআইডি মহানগর দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক জিসান।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, প্রতারক লতিফুল বিভিন্ন থানা থেকে নানাভাবে জিডির কপি সংগ্রহ করেন। সেই জিডি অনুযায়ী ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তৈরি করে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন। প্রতারক এত কনফিডেন্টলি কাজগুলো করেন যে, তার আচরণ দেখে যে কেউ বিশ্বাস করবেন তিনি আসলেই পুলিশ।
লতিফুল থানাগুলোর পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে জিডিগুলো সংগ্রহ করতেন কি না ও ভুয়া ওয়ারেন্ট কীভাবে তৈরি করতেন জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসান বলেন, ‘আমরা মাত্রই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শুধু অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন। আরও জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পারব।’
এ ঘটনায় এরই মধ্যে লতিফুলের বিরুদ্ধে রাজধানীর লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছে।