বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দিবস উপলক্ষে ‘নিষিদ্ধকে ভাঙি’ শীর্ষক এক উন্মুক্ত প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম (নাসাসু)।
আয়োজনটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘মাসিক সুরক্ষা একজন নারীর অধিকার’।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নারীদের লেখা প্রথম মাসিকের অভিজ্ঞতা, মাসিক সুরক্ষা পণ্যের দাম কমানো এবং মাসিক নিয়ে সমাজের প্রচলিত ট্যাবু বিষয়ক বিভিন্ন বার্তা প্রদর্শন করা হয়।
নাসাসুর সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ৯০ ভাগ স্কুলপড়ুয়া মেয়েরা ফার্মেসিতে যেতে লজ্জা পাওয়া, পরিবারের অসহযোগিতা এবং বাজারে উচ্চমূল্যের কারণে মাসিক সুরক্ষা পণ্য ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করেছে।
প্রদর্শনীর আয়োজকরা জানান, মাসিক সুরক্ষার বিষয়টি এখনও রাষ্ট্রীয়ভাবে আমলে নেওয়া হয়না। এমনকি এই বছর হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা এসেছে, নারীর মাসিক হয় বলে তারা বিবাহ রেজিস্টারের মত রাষ্ট্রীয় কাজে অংশ নিতে পারবে না। নাসাসু হাইকোর্টের এই নির্দেশনা বাতিল চেয়েছে।
আয়োজকরা আরও জানান, প্রায় প্রতি বাজেটে মাসিক সুরক্ষার পণ্যকে ‘বিলাসী দ্রব্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর উচ্চ শুল্ক এবং কর বসানো হয়। মাসিক সুরক্ষার বিষয়টিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে না দেখে, তাকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া ক্ষমতার অধীনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ নারীরা এইসব সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হন।
‘নিষিদ্ধকে ভাঙি’ শীর্ষক প্রদর্শনী থেকে ‘নাসাসু’ নারীদের নিরাপদ মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাত দফা দাবি জানিয়েছে।
দাবিগুলো হল, বাজেটে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার খাত তৈরি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যসম্মত মাসিক সুরক্ষা পণ্য উৎপাদন করা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দ্বারা উৎপাদিত মাসিক সুরক্ষা পণ্যের দাম কমানো, সবধরনের পিংক ট্যাক্স, ব্যবসায়িক স্বার্থে উৎপাদিত জেল প্যাড এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরি মাসিক সুরক্ষা পণ্যগুলোর বাণিজ্যিকিকরণ বন্ধ করা।
পাশাপাশি, বিনামুল্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে নারীদেরকে প্রতি মাসে মাসিক সুরক্ষা পণ্য দেয়া, মাসিকের সময় ছুটির বিষয়টি প্রতিটি কর্মক্ষেত্রের প্রশাসনিক নীতিমালায় যুক্ত করা এবং করোনাকালীন ত্রাণ, দুর্যোগকালীন ত্রাণ এবং রেশনে মাসিক সুরক্ষা পণ্য অন্তর্গত করা।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকেই ‘নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম’ প্রান্তিক নারী এবং স্কুলপড়ুয়া কিশোরীদের মাঝে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে।