রাজধানীর পল্লবী এলাকায় সাত বছরের ছেলের সামনে তার বাবা সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা মামলার আসামি ইকবাল নুর ও মো. শরিফ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এ সময় আসামি ইকবাল নুর ও মো. শরিফ আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন।
শুক্রবার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি সে আবেদন গ্রহণ করে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
অপরদিকে একই মামলার আসামি মো. টিটুকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে টিটুকে গত ২১ মে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব সদস্যরা।
আসামি টিটুর পক্ষে তার আইনজীবী মো. সিরাজুল ইসলাম জামিন আবেদন করেন।
বিচারক ৩০ মে রোববার শুনানির জন্য তারিখ দেন।
গত ২১ মে আসামি ইকবাল নুরকে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থেকে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন।
এ ছাড়া গত ২২ মে নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকা থেকে শরিফকে গ্রেপ্তার করে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।
দুই আসামির জবানবন্দি বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত গ্রহণ করেন মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি।
এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গ্রেপ্তারকৃত দশ আসামির মধ্যে আদালতে এ পর্যন্ত পাঁচজন দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
বাকি পাঁচজন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে এখন কারাগারে রয়েছেন বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন আদালতের পল্লবী থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেলিম ।
তিনি আরও জানান এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ১২ আসামির মধ্যে দুজন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত আর দশজন কারাগারে আটক রয়েছেন।
গত ১৬ মে পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের ৩১ নম্বর রোডে সাত বছরের ছেলের সামনে বাবা সাহিনুদ্দিনকে রাম দা, চাপাতি ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় নিহতের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার পরদিন পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গত ২০ মে এ ঘটনায় সাবেক এমপি এম এ আউয়ালকে ভৈরব এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গত ২৬ মে চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ১৬ মে বিকেল ৪টায় সুমন ও টিটু নামে দুই যুবক সাহিনুদ্দিনকে জমির বিরোধ মেটানোর কথা বলে ফোন করে ডেকে নেন।
পরে টিটুকে দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় তার শশুরবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সাহিনুদ্দিন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছালে সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে টেনে-হিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজের মধ্যে নিয়ে কুপিয়ে জখম করেন।
এরপর তাকে ওই বাড়ি থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে এনে ফের কুপিয়ে সেখানে ফেলে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যান হত্যাকারীরা।
এ সময় সাহিনুদ্দিনের সাত বছরের ছেলে মাশরাফি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।
নিহতের মা আকলিমা বেগমের অভিযোগ, পল্লবীর সেকশন-১২ বুড়িরটেকের আলীনগর আবাসিক এলাকার হ্যাভেলি প্রোপার্টিজ ডেভেলপার লিমিটেডের এমডি এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ভাড়া করা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করেন।
আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের ১০ একর জমি জবরদখলে বাধা দেয়ার জের হিসেবে তাকে খুন হতে হয়েছে।