এডিস ও অন্যান্য প্রজাতির মশা নিধনে খাল এবং জলাশয়ে থাকা কচুরিপানা এবং ভাসমান ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতে জার্মানি থেকে অত্যাধুনিক মেশিন আনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এডিস মশা নিধন এবং ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধ সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের খাল ও জলাশয় থেকে কচুরিপানা এবং অন্যান্য ভাসমান পদার্থ পরিষ্কার করে মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস ও পানির প্রবাহ ঠিক রাখার লক্ষ্যে এই মেশিন আমদানি করা হচ্ছে।’
চীন, জাপান, কোরিয়া এবং ব্রিটেনসহ বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের মেশিন ব্যবহার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবগুলো দেশের মেশিন যাচাই-বাছাই করে জার্মানি থেকে ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই মেশিন কচুরিপানাসহ ভাসমান পদার্থ এমনকি পানির এক মিটার নিচের ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতেও সক্ষম।’
এ সময় এডিস মশার প্রজনন বেড়ে যায় জানিয়ে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এডিস মশা স্বচ্ছ পানিতে জন্মে। তাই বাসাবাড়িতে কোথাও পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ব্যাপারে অনেক সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে। এরপরও যারা এডিস মশার প্রজননে ভূমিকা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, এডিস মশা নিধনে প্রয়োজনীয় কীটনাশক বিশেষ করে এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ফগিংমেশিন, প্রশিক্ষিত জনবলও প্রস্তুত রাখা আছে।
সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে অভিযান চালাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সিটি করপোরেশনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বলেন, ‘মানুষ সচেতন না হলে এবং খাল-জলাশয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করতে পারলে মশার প্রজনন বৃদ্ধি ঠেকানো সম্ভব হবে না। জনমানুষের অংশগ্রহণ অর্থাৎ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করা সম্ভব।’
মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের আওতাধীন অফিস এবং অন্যান্য অবকাঠামোতে যেন এডিস মশার লার্ভা না জন্মে সেদিকে নজর রাখতে হবে এবং নির্দেশনা দিতে হবে।
এ সময় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, রেলওয়ে, সিভিল এভিয়েশন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে ডেঙ্গু মশা নিধনে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
মেয়রের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এডিস মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত এসব প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়া ও প্রতিপালনে চিঠি দেয়ার নির্দেশ দেন মন্ত্রী। পরবর্তী মিটিংয়ে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকারও নির্দেশনা দেন তিনি।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জানান, ‘সিটি করপোরেশনসহ সকল প্রতিষ্ঠান আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং এসব প্রতিষ্ঠান তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রয়েছে।
‘এডিস মশা নিধনে এবং ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে বাধাপ্রাপ্ত হলে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার সিটি করপোরেশনের আছে।’
সভায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, খুলনা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়ক এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও অংশ নেন।