সংসদ ভবনে খোলা তলোয়ার নিয়ে হামলার পরিকল্পনা মামলার আসামি, আলোচিত ধর্মীয় বক্তা এবং ‘আমি ভার্সিটির মাল’-খ্যাত আমির হামজাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পাঁচ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।
এর পাশাপাশি একই আদালত আব্দুল্লাহ ও আনোয়ার হোসেনকে চার দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন। তারা দুজন এই জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে।
এর আগে শেরেবাংলা নগর থানায় পুলিশের করা এই মামলায় আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এরপর সংসদ ভবনে খোলা তলোয়ার নিয়ে হামলার পরিকল্পনায় শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের হেফাজতে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান।
মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের (সিএমএম) হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তার এ রিমান্ড আবেদন বিষয়ে শুনানি শেষে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ হয়।
মঙ্গলবার আমির হামজাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। ছবি: নিউজবাংলা
গত ৫ মে তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টার সময় সাকিব নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সাকিবকে আটকের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা হয়।
ওই মামলায় সাকিবসহ আলী হাসান উসামা ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীকে আসামি করা হয়।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, সাকিবের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘সাকিব মোবাইল ফোনে উগ্রবাদ বার্তাসংবলিত ভিডিও প্রচারকারী আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখ ব্যক্তির উগ্রবাদী জিহাদি হামলার বার্তাসংবলিত ভিডিও দেখে উগ্রবাদে আসক্ত হয়।’
ওই এজাহারে মুফতি আমির হামজার নাম ছিল। এর সূত্র ধরেই সোমবার বিকেলে কুষ্টিয়া থেকে আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি।
এদিকে এ ঘটনায় করা মামলায় আলী হাসান উসামা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য আল আমিন রিমান্ড শেষে কারাগারে রয়েছেন।
মুফতি আমির হামজা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের রিয়াজ সরদারের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসীর পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কুষ্টিয়ার সদরের ডাবিরাভিটা গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে হামজাকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আমির হামজার দাদা জান মোহাম্মদ।
তিনি জানান, হামজা গত রাতে বাড়ি এসেছিলেন। তিনি বাড়িতে থাকার সময় কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে করে পাঞ্জাবি পরা পাঁচ থেকে ছয়জন এসে তাকে নিয়ে যান।
তার দাবি, যারা এসেছিলেন, তাদের পোশাকে ডিবি লেখা ছিল, কোমরে ছিল পিস্তল।
তিনি বলেন, ‘নিয়ে যাওয়ার পর আমরা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি, কিন্তু তাকে কোথায় নেয়া হয়েছে কেউ বলতে পারছে না।’
স্থানীয় যুবক মো. রাকিব জানিয়েছেন, ‘ব্রিজের ওপর মাইক্রোবাসটি এসে থামে। এরপর একজন অপরিচিত লোক বাড়ি দেখিয়ে দেন। পরে দেখলাম আমির হামজাকে ধরে নিয়ে গেল।’
পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ শাখা কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পরে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, ওয়াজে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে সাম্প্রতিক একটি মামলায় আমির হামজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি পলাতক বলে প্রচার হচ্ছিল। তবে তিনি বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমি চোর নই যে পালিয়ে বেড়াব।’
এর আগে ওয়াজের মাধ্যমে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও দেশজুড়ে উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগে আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজাকে খুঁজছে পুলিশ, এমন খবর প্রকাশ হয়। পুলিশের দাবি, আমির হামজা ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে অবমুক্ত তার বেশ কিছু বক্তব্য উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। যা শুনে কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজকারী আমির হামজার জন্ম ১৯৯১ সালে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আল-কোরআনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন তিনি।
আমির হামজা যখন প্রথম ওয়াজ শুরু করেন, তখন নিজেকে পরিচয় দিতেন, ‘আমি ভার্সিটির মাল’।
তবে ওয়াজিয়দের একাংশ আবার এ নিয়ে তাকে আক্রমণ করার পর তিনি আর সে পরিচয় দেননি।
করোনার সঙ্গে পবিত্র কোরআনকে জড়িয়ে সমালোচিত
গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর আমির হামজা ক্রমাগতভাবে মাস্ক না পরতে উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন।
তার উৎসাহ পেয়ে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে মাস্ক পরতে বললে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
ফলে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে আমির হামজা তাদের ভুল পথে পরিচালিত হতে উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, করোনা এসেছে ইসলামে অবিশ্বাসীদের শায়েস্তা করতে।
তিনি এমনও বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কারও করোনা হবে না।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, আমির হামজা বলেন, ‘আমি কসম দিচ্ছি, আপনার কাছে করোনা আসবে না।
যদি আসে, আমার কাছ থেকে বুঝে নিয়ে যান। যদি আসে তাহলে কোরআন শরিফ মিথ্যা হয়ে যাবে। আল্লাহ কি তার কোরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করবেন?’
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলে হামজা তার মতো করে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, এই বক্তব্যের আগে-পরে তিনি আরও অনেক কিছু বলেছেন।
সেগুলো প্রচার না হওয়ায় তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন ।