ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের বাতাসে লাশের গন্ধ। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মর্গের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় মরদেহ পচে যাচ্ছে।
পাঁচটা ফ্রিজের দুইটা রোববার ঠিক করা হলেও তিনটা গত ছয় মাস ধরে অকেজো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মরদেহ পচে যাওয়ার কারণও এই নষ্ট ফ্রিজ। মর্গের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেন, ‘আমাদের মর্গের ফ্রিজ অনেকদিন ধরে অচল। তাই হাফিজুরের লাশটা পচে যায়।’
ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে মরদেহ রাখার পাঁচটা ফ্রিজ রয়েছে। একটা ফ্রিজে চারটা করে চেম্বার। পাঁচটা ফ্রিজে মোট ২০টা চেম্বার।
মর্গের ডোম ইব্রাহীম আলী বাবুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচটা ফ্রিজই নষ্ট ছিল। গতকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুইটা ঠিক করা হয়েছে।’
‘পাঁচটা ফ্রিজের তিনটা গত ছয় মাসের বেশি সময় ধরে নষ্ট। বাকি দুইটা নষ্ট ছিল গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে। ছয়-সাত মাস আগে সোহেল স্যার ফরেনসিকের প্রধান থাকা অবস্থায় চিঠি দিছিলাম, কিন্তু ঠিক করেন নাই। বর্তমানে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মাকসুদ স্যারকে জানানোর পরে ফ্রিজ ঠিক করার কাজ শুরু হইছে।’
রোববার দুপুর পর্যন্ত মর্গের পাঁচটি ফ্রিজই নষ্ট ছিল। ছবি: নিউজবাংলা
শুধু ফ্রিজ না ময়নাতদন্তের রুমের এসিও দীর্ঘদিন নষ্ট ছিল। কয়েকদিন আগে বর্তমান প্রধান ডা. মাকসুদ দুইটা এসির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
ইব্রাহীম আলী বাবুল বলেন, ময়নাতদন্তের রুমে এসি গত দেড়-দুই বছর ধরে নষ্ট ছিল। সোহেল স্যারকে কত বার জানানো হয়েছে। তিনি ‘দেখতেছি দেখতেছি’ বলে আর ঠিক করেন নাই। ভেতরে গরমে কাজ করতে খুব কষ্ট হতো। মাকসুদ স্যারকে জানানোর পরে ১৫ দিনের মধ্যে একটা চার টনের ও একটা দুই টনের এসি লাগাইছেন।
ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হাফিজুরের মরদেহ পচে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্রিজ নষ্ট থাকলে মরদেহ তো পচবেই। আমারা ভালো রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু ফ্রিজ ছাড়া তো ভালো থাকে না।
কয়েক বছরের পুরনো তিনটি মরদেহ আছে মর্গে। তবে ফ্রিজ নষ্ট হওয়ার কারণে সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এই মরদেহের আইনি রফাদফা না হওয়ার কারণে বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে মর্গের ফ্রিজে।
ঢাকা মেডিক্যালের আরেক ডোম রামু বলেন, দক্ষিণখানের ব্রিটিশ নাগরিক, কুমিল্লার থেকে আনা নাইজেরিয়ান নাগরিকের ও বারডেম থেকে আনা খোকন নন্দির মরদেহ কয়েক বছর ধরে ফ্রিজে আছে। ফ্রিজ নষ্ট হওয়ার কারণে এই মরদেহ পচে-গলে নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া অজ্ঞাত মরদেহ তো আসে নিয়মিত। এই অজ্ঞাত মরদেহ কিছুদিন রাখা হয় ফ্রিজে। তার পরিবার খোঁজ পাওয়া যায় কি না দেখার জন্য। পরে পরিবারের খোঁজ না পেলে আঞ্জুমান নিয়ে যায়।
মর্গের ভেতরে দেখা যায় তিনটা মরদেহ ফ্রিজের পাশে পচে পানি বের হচ্ছে। ভেতরে প্রচণ্ড গন্ধ।
এই মরদেহের ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু বলেন, এগুলো অজ্ঞাত লাশ। ফ্রিজ নষ্ট থাকার কারণে এভাবে পড়ে আছে। কাল আঞ্জুমান এসে নিয়ে যাবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ মাকসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বিভাগে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। কয়েকবার ফোন ও এসএমএস দিলেও তিনি সাড়া দেন নাই।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, মূলত মর্গের সঙ্গে আমরা ওভাবে জড়িত না। প্রিন্সিপাল এটার দেখভাল করেন। তার পরেও আপনি যেহেতু বলেছেন আমি এখনই খোঁজ নিচ্ছি। আমাদের যা করনীয় অবশ্যই সেটা করব।