প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রতীকী অনশন করেছেন নারী সাংবাদিকরা। একই সঙ্গে তারা অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে শনিবার তারা এ অনশন পালন করেন।
ওই সময় প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা পর্ষদসহ পুরুষ সাংবাদিকদের সংহতি প্রকাশ করতে দেখা যায়।
কর্মসূচিতে বলা হয়, গণমাধ্যমকর্মীরা যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তখন একজন সাংবাদিককে ‘চোর’ উপাধি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। তথ্য সংগ্রহ কোনো অপরাধ নয়।
নারী সাংবাদিকরা বলেন, রোজিনার অন্তত ২০টি প্রতিবেদন আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনিয়ম নিয়ে। তার প্রতিবেদন ধরে একজন আমলার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলো না। অথচ একটি অচল আইনে রোজিনার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হলো।
এমন অবিবেচনা প্রসূত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি চান।
প্রতীকী অনশনে সংহতি জানিয়ে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘শুরু থেকে সর্বস্তরের সাংবাদিকরা যেভাবে রোজিনার জন্য রাস্তায় নেমেছেন এবং তার সাথে সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ ও আপ্লুত।’
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘এখানে রোজিনা একটা উপলক্ষ মাত্র। যে অন্যায় ও হেনস্তার ঘটনা তার সাথে ঘটেছে সেটির ভুক্তভোগী পুরো সাংবাদিক সমাজ।
‘প্রতিবাদ করে শুধু রোজিনার মুক্তি নয়, পুরো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করতে এসেছি। সাংবাদিকদের হয়রানি করা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার যে পাঁয়তারা, সেগুলো প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নেমেছি।’
কর্মসূচি থেকে শুধু রোজিনার মুক্তি নয়, তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাও প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সচিবালয়ে ৫ ঘণ্টা আটকে রেখে রোজিনাকে যারা ‘অত্যাচার’ করেছেন, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
রোববার রোজিনাকে মুক্তি দেয়া না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণাও দেন তারা।
মুক্তির প্রত্যাশা ডিএসইসির
ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলও (ডিএসইসি) সাংবাদিক রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি, তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও ‘হেনস্তাকারী’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
সংগঠনটির আশা, রোববার আদালত রোজিনাকে জামিনে মুক্তি দেবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে শনিবার সংগঠনটির আয়োজনে এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ডিএসইসির মানববন্ধন। ছবি: নিউজবাংলামানববন্ধনে ডিএসইসির সভাপতি মামুন ফরাজী বলেন, ‘রোজিনা ইসলাম সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে প্রথম আলোতে ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ করেছেন, যার ফলে আমলারা তাকে ফাঁদে ফেলেছে বলে আমাদের ধারণা।
‘তিনি যদি নথি চুরি করতেন তাহলে ৫ ঘণ্টা কেন তাকে সচিবালয়ে আটকে রাখা হলো। আদালতে জামিন শুনানি শেষে আদেশ না দিয়ে কেন তাকে অপেক্ষা করানো হচ্ছে? আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি, কোনো একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান হৃদয় বলেন, ‘রোজিনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। সচিবালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, যারা তাকে হেনস্ত করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে আমাদের আন্দোলন চলবেই।’
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএসইসির সাবেক সভাপতি মোতাছিম বিল্লাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কবির, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আলম সেতু, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ।
রোজিনা ইসলাম সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে তাকে পাঁচ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন সেখানকার কর্মকর্তারা। রাতে তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি চুরির অভিযোগে মামলা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, এই গণমাধ্যমকর্মী রাষ্ট্রীয় কিছু গোপন নথি সরিয়েছেন; কিছু নথির ছবি তুলেছেন। এগুলো প্রকাশ হলে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নষ্ট হতে পারত। নথিগুলো ছিল টিকা ক্রয়-সংক্রান্ত।