ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার পর পাশে দাঁড়াতে উদগ্রীব বাংলাদেশিরা টাকা পয়সা দিয়ে চেষ্টা করছেন সহযোগিতার।
বারিধারায় দূতাবাসে গিয়েই তারা দিয়ে আসছেন টাকা। আর তাদের জন্য দূতাবাসের প্রধান ফটক আংশিক খোলা রাখা হয়েছে।
ভেতরে সাধারণ মানুষের আনাগোনা। বাইরে ব্যস্ততা গণমাধ্যম কর্মীদের।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারোটায় দূতাবাসে গিয়ে দেখা যায়, যুদ্ধ বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য অনুদান নিয়ে যাচ্ছেন বহুজন। নিরাপত্তারক্ষী সবাইকে হাসিমুখে অনুদান দেয়ার জায়গা নির্দেশ করে দিচ্ছেন।
দূতাবাসে ঢুকতেই দেখা যায়, বাইরে অনেকগুলো ওষুধের বাক্স রয়েছে। ভেতরে ঢুকেই দেখা গেল, দেয়ালে ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের ছবি।
কেউ অর্থ সাহায্য দিচ্ছেন, আবার কেউ ওষুধ দিয়ে সাহায্য করছেন। দুইজন নারী ও একজন পুরুষ ব্যস্ত আছেন অনুদান নিতে।
রাজধানীর বাসিন্দা এক তরুণ সেখানে জমা দিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা, আরেকজন দিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। এমন আরও অনেকে দিচ্ছেন, এমনকি ৫০০ টাকা দিতেও দেখা গেল।
কর্মীরা জানান, গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর থেকেই দিনভর শত শত মানুষ যাচ্ছেন ভালোবাসার দান নিয়ে।
মিরপুর থেকে ওষুধ নিয়ে এসেছেন শিক্ষার্থী সাজিদ হোসেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকার কয়েকজন বন্ধু মিলে কিছু ওষুধ কিনেছি।’
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে অনুদান দেয়ার বিষয়টি জেনেছিলাম। সেখানে কিছু ওষুধের কথা বলা হয়েছিল। তাই কয়েকজন বন্ধু মিলে উল্লেখিত ওষুধ কিনেছি।’
রাজধানীর খিলগাঁও থেকে রাইসিন গাজী এসেছেন প্রতিবাদ জানাতে। হাতে প্ল্যাকার্ড আর গায়ে জড়িয়েছেন ফিলিস্তিনের পতাকা। অনুদানের বিষয়টি তার জানা ছিল না।
রাইসিন নিউবাংলাকে বলেন, ‘আমি ইসরায়েলের অগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। তবে এখানে এসে আমি অবাক হয়েছি। সবাই অর্থ অথবা ওষুধ সাহায্য নিয়ে এসেছে। আমার এটা একদম জানা ছিল না। আমিও এর পরের বার অর্থ সাহায্য নিয়ে আসব।’
ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান একমি থেকে একটি ছোট কাভার্ড ভ্যানে ওষুধ এসেছে অনুদান হিসেবে। আরও অনেকগুলো মানবিক সংস্থা থেকেও এসেছে একই ধরনের উপাদান।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাহসিন আল জাবিও এসেছেন ওষুধ নিয়ে। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কিছু ওষুধ কিনে এনেছি। আমার কাছে দূতাবাসের দেয়া একটি রশিদ রয়েছে। আমি এটা ফেসবুকে আপলোড করব যাতে অন্যরা বিশ্বাস করে।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুইজন কর্মকর্তা মো. ফখরুল ও তানভীরকেও দেখা গেল সেখানে।
ফখরুল বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের জন্য ভালোবাসা থেকেই এসেছি। সেখানে গিয়ে তো আর কিছু করতে পারব না। তাই এখানে এসে কিছু সাহায্য করেছি। আমাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যারা কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন তারা সবাই মিলে কিছু অর্থ নিয়ে আসলাম। এখানে ছাড়া তো বিশ্বস্ত কোন জায়গা নেই অনুদানের। এখানে এসে দূতাবাসে কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছি।’
দূতাবাসের একজন কর্মচারী বলেন, ‘গত দুই দিন থেকেই এখানে অনেক বাংলাদেশি নাগরিক সাহায্য দিতে আসছেন। তবে এ বিষয়ে আমাদের কথা বলা মানা রয়েছে। আপনি চাইলে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তবে স্যার অনেক ব্যস্ত আছেন।’
কী কী সাহায্য দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থ ও ওষুধ সাহায্য করা হচ্ছে। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি থেকে ওষুধ এসেছে।’
পরে রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের সঙ্গে অনুদান নিয়ে যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। তিনি শুক্রবার এই বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
অনুদানের আহ্বান
এর আগে গত সোমবার দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বার্তায় অনুদান আহ্বান সংক্রান্ত বার্তা দেয়া হয়। সেটি দূতাবাসের ফেসবুক পেইজেও দেয়া হয়।
বার্তায় জানানো হয়, নিম্নোক্ত নম্বরে অর্থ পাঠানো যাবে-
০১৭১৫৮৩৩৩৩০২ (রকেট, পারসোনাল), ০১৭১৫০৮১৮৩৯ (বিকাশ, পারসোনাল), ০১৭১৫০৮১৮৩৯ (নগদ, পারসোনাল), ০১৩০১৭৯৪২৯৫ (বিকাশ, পারসোনাল), ০১৫৩১৭১২৯৪৫ (বিকাশ, পারসোনাল)।
তবে দূতাবাস থেকে জানানো হয়, শুধুমাত্র ফিলিস্তিন দূতাবাসের অফিশিয়াল বিকাশ-রকেট-নগদে টাকা দেয়া যাবে। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে ফিলিস্তিন দূতাবাসে ফোন অথবা ই-মেইল করতে হবে। ফিলিস্তিন দূতাবাসের ফোন নম্বর, ঠিকানা এবং ই-মেইল গুগলে পাওয়া যাবে। অথবা ফিলিস্তিন দূতাবাসের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গিয়ে তথ্য জেনে নিতে হবে।
কেউ যদি সরাসরি টাকা অথবা ওষুধ দিতে চায় তাহলে বারিধারায় অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাসে আসতে হবে।
এসব নম্বরে অনুদান পাঠানোর পর অর্থের অঙ্ক ও প্রেরকের পরিচয় ০১৯৮৮১৪১৪১৪ নম্বরে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।
কী চলছে ফিলিস্তিনে?
মুসলমান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি খ্যাত অবরুদ্ধ পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল উত্তেজনা। এর জেরেই শুরু হয় সহিংসতা।
আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ইসরায়েলে রকেট ছোড়ে হামাস। পাল্টা জবাবে ১০ মে থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
গাজায় একের পর এক বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর
২০১৪ সালের পর অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলায় এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
এদের মধ্যে ৪৭ হাজার মানুষের ঠাঁই হয়েছে জাতিসংঘ পরিচালিত বিভিন্ন স্কুলে।
অবরুদ্ধ গাজায় ১০ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনে প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৭ জনে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ জন নারী ও ৬৪ জন শিশু।
১১তম দিনের মতো চলছে সহিংসতা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে বৃহস্পতিবার ভোরেই ১০০ দফার বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। জবাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহীরাও।