নিষিদ্ধ অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে টাকা পাচারের অভিযোগে একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)।
রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এই চারজনকে আটক করা হয়। পরে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা এনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাদের।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার।
বুধবার সকালে বারিধারা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এটিইউ জানায়, ‘স্ট্রিমকার’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার হচ্ছে। এটি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ অ্যাপ। গ্রেপ্তারকৃতরা এই অ্যাপ পরিচালনার জন্য বেতনভুক্ত তরুণীদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। তারা লাইভ চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহককে নানাভাবে আকৃষ্ট করেন। কয়েক হাজার নারী আছে এই চক্রে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।
এটিইউ বলছে, প্রবাসীরাই এই চক্রের মাধ্যমে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন। মোবাইল ব্যাংকিং ও কোরিয়াভিত্তিক একটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে এই অর্থ। নিষিদ্ধ অ্যাপটির লক্ষাধিক ব্যবহারকারী আছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান জানান, ‘স্ট্রিমকার’ অ্যাপে গ্রুপ চ্যাট, লিপ সিং, ড্যান্স, গল্প, কবিতা, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অনলাইন জুয়া খেলার অপশন রয়েছে।
তিনি জানান, এটিইউ দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে এই ধরনের প্রতারণা ও ডিজিটাল মুদ্রা পাচার রোধে কাজ করছে। এর অংশ হিসেবে ‘স্ট্রিমকার’-এর মাধ্যমে দেশের যারা সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করছে এবং ডিজিটাল মাধ্যমে মুদ্রা পাচার করেছে তাদের কয়েকজন মাস্টারমাইন্ডকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, ‘স্ট্রিমকার’ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি আছে।
ইউজার আইডিধারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রেটিদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার জন্য এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন। আর হোস্টরা একটি হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই অ্যাপে হোস্টিং করেন।
এটিইউ বলছে, সুন্দরী তরুণী ও সেলিব্রেটিরাই এই এজেন্সির মাধ্যমে হোস্ট আইডি খোলেন। এতে দুই ধরনের এজেন্সি আছে। বিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি। বিন্স এজেন্সিগুলো বিদেশি এই অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স কিনে ইউজারদের কাছে বিক্রি করে।
‘স্ট্রিমকার’ অ্যাপের ইউজাররা এই বিন্স হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেয়ার জন্য গিফট হিসেবে দিয়ে থাকে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান জানান, স্ট্রিমকার অ্যাপে বিন্স ও জেমস নামে দুই ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১ লাখ বিন্সের দাম ১ হাজার ৮০ টাকা। প্রতি ১ লাখ জেমসের দাম ৬০০ টাকা বা তার কম। তবে ইউজার ও হোস্টিংদের বিনিময়ের ক্ষেত্রে এক বিন্স সমান এক জেমস হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
ইউজাররা হোস্টদের গিফট হিসেবে বিন্স প্রদান করেন, হোস্টদের কাছে গেলেই তা জেমস হিসেবে বিবেচিত হয়। সঞ্চিত জেমসের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেই হোস্টদের আয় কম-বেশি হয়ে থাকে।
তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেমসের ওপর নির্ভর করলেই চলে না, হোস্ট ইউজার হিসেবে প্রতিদিন এবং প্রতিমাসে নির্দিষ্ট সময় লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বিন্স ও জেমস দুই ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি ‘স্ট্রিমকার’ এর চালিকা শক্তি। দেশীয় বিন্স এজেন্সিগুলো সাব এজেন্সি নিয়োগসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরীদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকে।
এটিইউ বলছে, বাংলাদেশে যারা বিন্স এজেন্সি পরিচালনা করে থাকেন তারা হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপ্টো কারেন্সি কোরিয়াভিত্তিক উরি ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন।
প্রতারকচক্রের চার সদস্য ও তাদের সহযোগী হিসেবে পলাতক পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে সাভার থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দেশে স্ট্রিমকারের অনেক এজেন্সি আছে। এদের মধ্যে এভারগ্রিন ও লগআউট অন্যতম। বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে এসব এজেন্সির লোকজনকে নিষিদ্ধ অ্যাপের ইউজার হিসেবে গ্রহণ করে। তারপর নানা কৌশলে ইউজারদের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।