সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন করলেন তার সহকর্মীরা। তারা বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। তাকে হেনস্তা করা হয়েছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তার মুক্তি সম্ভব।
মঙ্গলবার বিকেলে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সোমবার সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। পরে রাতে তাকে রাজধানীর শাহবাগ থানায় নেয়া হয় ও মধ্যরাতে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
মানববন্ধনে প্রথম আলোর কর্মীরা ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সংবাদকর্মী ও সাংবাদিক নেতারা অংশ নেন। এতে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড বহন করেন প্রথম আলোর সাংবাদিকরা। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘বিপন্ন সাংবাদিকতা, কাঁদছে বাংলাদেশ’, ‘সাংবাদিকতা অপরাধ নয়’, ‘প্রিজন ভ্যানে সাংবাদিকতা’ ‘সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার ভবিষ্যত কী?’ ইত্যাদি।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক মানববন্ধনে বলেন, ‘রোজিনা ইসলাম একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। সচিবালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি হয়রানির শিকার হয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আইনগতভাবে তার জামিনের আবেদন করেছি। এখানে যে আমরা দাঁড়িয়েছি, এর মাধ্যমে আমরা চাই তার মামলা যেন প্রত্যাহার করা হয় এবং তাকে যেন নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। তাকে যারা হেনস্তা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটা আইনি প্রক্রিয়ার বাহিরে হতে পারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এইটা একটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। যেমন আজকে রিমান্ডের আবেদনটা না করলে আমরা জামিন পেতেও পারতাম। কিন্তু একজন নাগরিক ও সাংবাদিক হিসেবে আমি মনে করি, এইটা একটা মিথ্যা মামলা। আমাদের আইনজীবী আদালতে বলেছেন এইটা কোনো মামলাই দাঁড়ায় না।’
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘রোজিনা ইসলাম দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। তার সাংবাদিকতার সুনাম বিদেশেও রয়েছে। গত কিছু দিন ধরে যেহেতু কোভিডের কারণে স্বাস্থ্যখাত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে, সেহেতু তিনি স্বাস্থ্যখাত নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছেন। তার রিপোর্টে স্বাস্থ্যখাতের অনেক অনিয়ম উঠে এসেছে। এছাড়া স্বাস্থ্যখাতের নিয়োগের অনিয়মসহ তার বেশ কিছু রিপোর্ট আলোচিত হয়েছে। আমাদের শক্ত ধারণা এসব রিপোর্টের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের আক্রোশের শিকার রোজিনা ইসলাম হয়েছেন।’
সাজ্জাদ শরিফ বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আইনের পথে মোকাবিলা করব। আমরা আদালতের প্রতি আস্থাশীল। রোজিনা কোনো অন্যায় করেননি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এভাবে সাংবাদিকতা করে এসেছেন। তার এই সাংবাদিকতার মাধ্যমে সাংবাদিকতা, দেশ ও মানুষ উপকৃত হয়েছে।’
মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে যারা বক্তব্য রাখেন তাদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ।