পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় সচিবালয়ে অবরুদ্ধ রাখার পর তুমুল আলোচনার মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নথি গায়েবের অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার রাত ৯টার দিকে রোজিনাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এর আগে সচিবালয়ে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা তাকে আটক করে রাখে সচিবালয়ে কর্মকর্তা ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, সোমবার বিকেল তিনটার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁঞার রুমে ঢুকে ‘ভ্যাকসিন সংক্রান্ত ফাইল’ সরিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রোজিনা ইসলাম।
এরপর তাকে মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ওই কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা রোজিনাকে আটকের ঘটনাকে ‘অতি বাড়াবাড়ি’ দাবি করেন।
প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ফেসবুকে লিখেন, ‘প্রথম আলোর রিপোর্টার রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়েছে।
‘বিষয়টি নিয়ে আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ সচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী রোজিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নথি চুরির অভিযোগ আনলে রাত পৌনে নয়টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। এ সময় সচিব লোকমান হোসেন মিয়াসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে কেন রোজিনাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হলো সে বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
পুলিশ প্রহরায় রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে দ্রুতবেগে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারাও কোনো কথা বলেননি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নথি সরানোর অভিযোগে রোজিনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আমাদের হেফাজতে দিয়েছেন। তারা মামলার একটি এজাহারও আমাদের দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, তিনি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তুলেছেন এবং কিছু নিজের সঙ্গে লুকিয়ে রেখেছেন। তল্লাশিতে তার কাছ থেকে লুকানো বেশ কিছু নথি পাওয়া গেছে।’
তবে সচিবালয়ে আটক থাকা অবস্থায় বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে রোজিনা ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গিয়েছিলাম স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে দেখা করতে। এ সময় সচিবের পিএস সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। আমি কোনো ফাইল নিইনি।’
রোজিনা ইসলামের মুক্তি চেয়ে শাহবাগ মোড়ে সাংবাদিকদের অবস্থান। ছবি: নিউজবাংলারোজিনাকে শাহবাগ থানায় আনার খবর পেয়ে সেখানে ছোটে যান তার সহকর্মীসহ অনেক সাংবাদিক। শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন তারা। রোজিনার মুক্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। রাত ১২টা পর্যন্ত শাহবাগ থানাতেই ছিলেন রোজিনা। তার সঙ্গে কাউকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছিল না।