বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পানির নিচে বীজতলা, আমন আবাদে বিপর্যয়ের শঙ্কা

  •    
  • ৮ আগস্ট, ২০২১ ২০:৫৭

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর বরগুনায় ৮ হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় বরগুনায় ৫ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির বীজ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং এক হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।

টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় উপকূলে আমনের বিস্তীর্ণ বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরির সময় নেই, এ অবস্থায় এবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে আমন উৎপাদন।

আবহাওয়া অফিস জানায়, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে উপকূলীয় বরগুনা জেলায় ৪৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। টানা ভারি বর্ষণের ফসলের মাঠে পানি জমে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর বরগুনায় ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। এ জন্য ৮ হাজার ৪৪৮ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় জেলায় ৫ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির বীজ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত এবং এক হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতায় এ বছর আমনের সব বীজতলাই নিমজ্জিত হয়েছিল। নিচু বীজতলার প্রায় সব বীজ নষ্ট হয়ে যায়।

‘কিছুটা উঁচু জমিতে তৈরি বীজতলার বীজ আংশিক নষ্ট হলেও বীজ রোপনের জন্য জমি প্রস্তুতের সময়ে এসব বীজ রোপন উপযোগী হয়ে উঠবে। বীজতলা নষ্ট হওয়ার প্রভাব পড়বে উপকূলীয় এ জেলার আমন ফলনে।’

তিনি বলেন, ‘আমন বরগুনার কৃষকদের প্রধান ফসল। এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবেনা।’

বরগুনা সদরের খাজুরতলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমনের জন্য আধগানি (দুই একর) জমিতে বীজতলা করেছি। দেওইর (বৃষ্টি) কারণে আলচাষ (হালচাষ) করতে পারিনায়। এহন পানি কমছে, চাষবাস কইররা জমিতে বীজ লাগামু। কিন্তু বীজ সব পইচ্চা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন কি রুমু খ্যাতে? নতুন কইররা বীজ করারও সোমায় নাই এহন।’

একই এলাকার কৃষক খলিল হাওলাদার বলেন, ‘মোগো দক্ষিণ খাজুরতলা, লাকুরতলা, বেতবুনিয়া, সোনারবাংলাসহ আশপাশের বেবাক এলাকার আমনের বীজ নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন মোরা কি রুমু (রোপন করবো) !’

আমতলী উপজেলার হলদিয়া, আঠারগাছিয়া, আমতলী সদর এবং তালতলীর ছোটবগী, পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নে মাঠের পর মাঠ এখনও পানিতে তলিয়ে আছে।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, এ বছর আমতলী ও তালতলী উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। অতিবর্ষণে দুই উপজেলার আমনের বীজতলার ৯০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

সময়মতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আমতলীর আঠারগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর, কুকুয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া ও তালতলীর পচাকোড়ালিয়া, শারিকখালী, কড়াইবাড়িয়া, ছোটবগী ও বড়বগী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতায় আমনের বীজ নষ্ট হয়েছে।

চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার মৃধা বলেন, ‘আমনের খেতে এহন বীজ রোয়ার সময়, জমিন রেডি করছি চাষাবাদ কইররা, কিন্ত মোগো বীজ সব শ্যাষ, দেওইর পানি জইম্মা প্রায় সব বীজ নষ্ট।’

পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, 'আবাদ করনের লইগ্যা মুই ২০ কাডি ধান বীজতলা বানাইতে খ্যাতে হালাইছিলা, এহন সব বীজ পানির তলে, দেওই না কোমলে সব নষ্ট অইয়া যাইবে। হেলে মোগো এইফির আর আমন ধান ঘরে ওডবে বইল্যা মনে অয় না।’

তালতলীর নিদ্রা এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি কমার পর জাগা চইয়া রেডি করছিলাম বীজ রোয়ার লইগ্যা। বীজের খ্যাতে যাইয়া দেহি সব নষ্ট, বীজ তুইল্লা খ্যাতে রুইতে পারমু কিনা কইতে পারিনা।’

একই অবস্থা বেতাগী ও বামনা উপজেলার আমন বীজতলার।

বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের কৃষক জালাল মিয়া বলেন, ‘মোগো খ্যাতের বীজ সব পানতে তলাইয়া পঁচন ধরছে। এই বীজ খ্যাতে লাগাইন্না সোম্ভাব না। আমন ধান ঘরে না ওডলে গুরাগারা লইয়া না খাইয়া মরা লাগবে মোগো।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অতিবর্ষণে কৃষি সমৃদ্ধ বরগুনায় আমন আবাদে ক্ষতি হয়েছে। বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে কৃষি বিভাগকে কৃষকদের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর