সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। ভালো দাম পেয়ে পাট চাষে ঝুঁকছেন টাঙ্গাইলের নাগরপুরের অনেক চাষি। এবার সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। পাট তোলায় ব্যস্ত কিষান-কিষানি, এ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে গ্রামে।
নাগরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, গত বছরের চেয়ে এবার পাট চাষ বেড়েছে। উপজেলায় ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আগের বছর আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৩৩১ হেক্টর জমিতে।
অন্য ফসলের চেয়ে পাটের জমিতে শ্রমিকের মজুরিসহ অন্য খরচ কম। এতে লাভ বেশি হওয়ায় উপজেলার কৃষকদের মাঝে পাট চাষের আগ্রহ বেড়েছে। গত মৌসুমের শেষের দিকে পাটের দাম দাঁড়িয়েছিল মণপ্রতি ৬ হাজার টাকায়।
পাটের আঁশ শুকাতে দিচ্ছেন কৃষক
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, প্রকৃতি ও বাজার চাষিদের অনুকূলে হওয়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নাগরপুরে প্রতিবছরই বাড়ছে। এ বছর আবাদ করা পাটগাছ কেটে কৃষকরা এরই মধ্যে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানান চাষিরা।
নাগরপুর উপজেলা অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় কমবেশি সব ইউনিয়নে পাটের আবাদ হয়ে থাকে। বাজারদর অনুযায়ী উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে পাটের ভালো লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা।
তারা জানান, বীজ বপনের সময় আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলেও পরে সময়মতো বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্ষার পানি আসার পর তারা পাট কাটা শুরু করেন। ওই পানিতেই জাগ দেন। গ্রামাঞ্চলে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বাড়ির পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নাগরপুরের গয়হাটা ইউনিয়নের চাষি রবি মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে পাট চাষে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এর মধ্যে রয়েছে বীজ, সার, কীটনাশক, পরিচর্যা ও রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত আনুষঙ্গিক খরচ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আমি দুই জাতের পাটের আবাদ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস পাটবীজসহ বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। এলাকায় পাটের হাট হিসেবে প্রায় প্রতিটি বাজার পরিচিত হলেও গয়হাটার হাট উল্লেখযোগ্য। সেখানে দূরদূরান্ত থেকে ব্যাপারীরা এসে পাট কিনে নিয়ে যান।’
পাট কাটতে ব্যস্ত কৃষক
পাটচাষি হাসমত আলী বলেন, ‘ধানের মতো পাটের বাজারও যেন সিন্ডিকেটের দখলে চলে না যায়, সে জন্য সরকারিভাবে পাটের দাম নির্ধারণ ও ক্রয়ের উদ্যোগ নিতে হবে।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইমরান হোসেন শাকিল নিউজবাংলাকে জানান, পাটের জমিতে শ্রমিক কম লাগে, জমির আগাছা ওষুধ প্রয়োগ করেই নির্মূল সম্ভব। সব মিলিয়ে পাটের দাম বেড়েছে। পাট ছাড়ানোর পর কাঠি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এসব কারণে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষকরা পাট চাষে ঝুঁকছেন।
বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল পাট চাষ করে কৃষকের লোকসান হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই বলে জানান কৃষিবিদ ইমরান।