বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আমন চাষে বীজ-সংকট

  • এস এম আমিনুল ইসলাম, খুলনা    
  • ৫ আগস্ট, ২০২১ ০৮:৪৮

পাইকগাছার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডিলারগের কাছে বীজ আছে। তারা দাম তিন গুণ বেশি করে নেচ্ছে। যে বীজ সরকার তাদের দিছিল তার সব বীজ তো লাগেনি। তাহলে বাকি বীজ কোথায় গেল?’

খুলনায় আমন ধান চাষে দেখা দিয়েছে বীজসংকট। সরকারি গুদামে নেই বীজ। খোলা বাজারেও চাহিদা অনুযায়ী বীজ মিলছে না।

দ্বিতীয় দফায় বীজতলার জন্য চারা উৎপাদনে এ সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে এবার কৃষকদের একটি বড় অংশ চাষবাদ থেকে বঞ্চিত হবে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর খুলনার ৯ উপজেলায় ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর জন্য ৪ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে বীজতলায় চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

কৃষকরা আমনের চারার জন্য ৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে বীজতলা প্রস্তুত করে। কিন্তু গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে প্রায় ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার কৃষকরা।

কয়রা উপজেলার কৃষক মোস্তাজিবুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমবার পানিতি চাতর (বীজতলা) নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রাবণ মাসের অর্ধেকের বেশি পার হয়ে গেছে। নতুন করে চারা বানাইয়ে ধান লাগাতে নাবি (দেরি) হয়ে যাবেনে। বীজ তো পাওয়াই যাচ্ছে না।’

উপজেলার বেদকাশী ইউনিয়নের কৃষক আল আমিন সানা বলেন, ‘বৃষ্টিতে বিলির পানি সরিনি। সব বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন বীজতলার জন্যি ৪০০ টাকা বস্তার ধান কিনিছি ১২০০ টাকা দিয়ে। এ বছর জমি চাষে খরচ বেশি হয়ে যাবেনে। খরচ পুষাই নিয়াও কঠিন হবেনে।’

দাকোপ উপজেলার কৃষক নিরঞ্জন বৈদ্য জানান, গত কয়েক দিন উপজেলা সদরে খোঁজ করেও আমনের বীজ পাননি তিনি। গ্রামের একজনের বাড়িতে অতিরিক্ত পাঁচ কেজি আমন বীজ ছিল। সেগুলো দিয়ে নতুন করে বীজতলা করার চেষ্টা করছেন তিনি।

পাইকগাছার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডিলারগের কাছে বীজ আছে। তারা দাম তিন গুণ বেশি করে নেচ্ছে। যে বীজ সরকার তাদের দিছিল তার সব বীজ তো লাগেনি। তাহলে বাকি বীজ কোথায় গেল?’

খুলনা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বীজ) উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘খুলনার গুদামে উপকূলীয় অঞ্চলে চাষের মতো কোনো বীজ নেই। লবণসহিষ্ণু জাতের ধান আমরা আগেই ডিলারদের মাধ্যমে সরবরাহ করেছি। এখন শুধু ৩৪ জাতের ধান রয়েছে গুদামে। এগুলোতে পোলাও-বিরিয়ানির চাল হয়। এটা খুলনায় চাষের জন্য উপযুক্ত না।’

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘উপজেলায় মোট ১৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। এর জন্য ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৯৬৫ হেক্টর জমির বীজতলা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে।

কৃষকদের বিভিন্ন এলাকা থেকে বীজ কেনায় কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করছে বলে জানান তিনি।

কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কয়রা উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। বৃষ্টির কারণে ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলা ও পাশের জেলাগুলো থেকে বীজ এনে সমন্বয় করতে।’

বীজ-সংকটের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা উদ্বৃত্ত বীজের খোঁজ নিচ্ছি। তবে কৃষকরা জমির প্রকৃতি বুঝে ধানের জাত নির্বাচন করেন। যেখানে যে ধান প্রয়োজন সেখানে সেই ধানের বীজ এবার হয়তো পাবেন না তারা। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের দুর্ভোগ পোহাতে হতে পারে। এরপরও আমরা পাশের জেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বীজধান সরবরাহের চেষ্টা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর