বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে খুলনা জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে ২০০ হেক্টর আমন বীজতলা নষ্ট হয়েছে। মৎস্য ঘেরে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৫০ কোটি টাকা। অনেক ঘর-বাড়ি ও সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমিনুল আজাদ জানান, খুলনায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১ মিলিমিটার এবং বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এ ছাড়া কয়রায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯ মিলিমিটার ও বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, জোয়ারের প্রভাবে নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে খুলনা জেলার উপকূলীয় অঞ্চল দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছার নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ডুবে গেছে মৎস্য ঘের, আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কয়রার গাতিরঘের এলাকার বাসিন্দা মওলা বক্স জানান, জোয়ার ও বর্ষার পানিতে তার উঠান ও গোয়ালঘরে পানি উঠে গেছে। ফলে পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে দারুণ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।পাইকগাছার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানিয়েছেন, পানির চাপে পাইকগাছার গদাইপুর, রাড়ুলী, চাঁদখালী, লস্কর, কপিলমুনি ও হরিঢালীসহ বিভিন্ন স্থানে মৎস্য ঘের, আমন বীজতলা ও ফসলী জমি তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।পাইকগাছার মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী ইউনুছ আলী জানান, দুই দিনের টানা বৃষ্টিপাতে তার ১০ বিঘার মৎস্য ঘের পানিতে ডুবে গেছে। জাল ও নেট দিয়ে রক্ষার চেষ্টা চলছে।
দাকোপের ঘের ব্যবসায়ী সোহাগ আহমেদ বলেন, ৫ বিঘার ঘেরে সব পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু সব মাছ পানিতে ভেসে গেল। এখন আর কোনো উপায় রইল না।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, অতিবর্ষণে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে তাতে চরম ভোগান্তির তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া দুই দিনের বৃষ্টিতে এলাকার মানুষের আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে রয়েছে। এতে আমন চাষ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার বিশ্বাষ বলেন, টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে খুলনা জেলায় ডুবে যাওয়া মৎস্য ঘেরে অন্তত ৫০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।খুলনা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাফিজুর রহমান জানান, ভাটা শেষ না হতেই জোয়ার শুরু হচ্ছে। অন্যদিকে বর্ষা হচ্ছে। এ অবস্থায় খুলনা জেলায় ২ শ’ হেক্টর আমনের বীজতলা পানিতে ডুবে রয়েছে।