গয়াল বা বনগরু। গহিন জঙ্গলের এই প্রাণী এখন কুমিল্লার সমতলভূমিতে লালনপালন হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গরুর পাশাপাশি গয়াল পালন জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
গয়াল গভীর জঙ্গলের প্রাণী হলেও দেখতে গৃহপালিত গরুর মতো। বনে এদের বসবাস বলে এদের বনগরু বলা হয়। আকারে বিরাট। গয়ালের ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
একটি প্রাপ্তবয়স্ক গরু দিনে যে খাবার খায়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক গয়াল খায় তার দ্বিগুণ। বুনো গয়াল দলবদ্ধভাবে বাস করে। সাধারণত ১০-১১ মাস গর্ভধারণের পর স্ত্রী গয়াল একটি বাচ্চার জন্ম দেয়।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বাসিন্দা সাকিউল হক আলভী। এক বছর আগে শখের বশে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে দুটি গয়াল আনেন। নাম রাখেন বড় মিয়া ও ছোট মিয়া।
বড় গয়ালটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ছোট গয়ালটি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় কিনে আনেন। গাড়ি ভাড়াসহ তার খরচ পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
আলভী জানান, বড় গয়ালটির ওজন এখন ১৬ মণ। তিনি বড় গয়ালটি তার চাচা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর কাছে ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। আর ছোট গয়াল কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ৩ লাখ টাকা হলে এটি বিক্রি করবেন আলভী।
ফাতেমা অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সাকিউল হক আলভী নিউজবাংলাকে জানান, তার ফার্মে গরুর পাশাপাশি তিনি গয়াল লালনপালন করছেন। পরীক্ষামূলকভাবে পালন করা গয়াল দুটি থেকে ভালো মুনাফা হবে বলে আশা করছেন তিনি। তাই আগামী কোরবানির ঈদ টার্গেট করে তিনি আরও বেশ কিছু গয়াল পালন করবেন বলে জানান।
গয়াল তৃণভোজী। হাতির মতোই গয়ালের খাদ্যাভ্যাস। শক্ত ও কর্কশ ঘাস খাওয়ার কারণে গয়ালের দাঁত দ্রুত ক্ষয় হয়। এই ক্ষয় পূরণে এদের ক্ষার ও লবণযুক্ত মাটি খেতে হয়। অবশ্য অন্ত্রের পোকা কমানোর জন্যও এরা লবণ খায়। এই অভ্যাসের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে লবণের টোপ ফেলে গয়াল শিকার করে পাহাড়িরা। তারপর পোষ মানানো হয়।
বর্তমানে কুমিল্লায় যেসব গয়াল দেখা যায়, তার বেশির ভাগই লবণের ফাঁদ দিয়ে শিকার করা বুনো গয়াল।
কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম শাওন। তিনি একান্নবর্তী অ্যাগ্রো প্রজেক্টের মালিক। শাওন জানান, ছয়-সাত মাস আগে শখের বসে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে একটি গয়াল এনে লালনপালন করেছেন। গয়ালটির ওজন এখন ১৪ মণ ।
নাজমুল জানান, তার পালন করা গয়ালটি সাড়ে ৫ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন। পাশাপাশি তিনি আগামী বছর কোরবানির ঈদ টার্গেট করে গয়াল লালনপালন করবেন।
কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গরু লালনপালনের মতো করেই গয়াল পালন করা যায়। তবে গরুর চেয়ে গয়ালের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। কুমিল্লায় যারা গয়াল পালন করতে ইচ্ছুক, তারা চাইলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তার দপ্তর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।