গরম পড়েছে। তাই এবার ফলন কম। কিন্তু তাতে দামে খুশি গাজীপুরের লটকন চাষিরা। চিন্তার ভাজ কেবল বাগান কিনে নেয়া ব্যাপারিদের কপালে। তারা আছেন করোনাকালে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে বিক্রি নিয়ে শঙ্কায়।
গাজীপুরে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন। ভারি বৃষ্টিতে হলুদ রঙে পরিপক্ব হচ্ছে সুস্বাদু এ ফল। ভিটামিন-সিতে ভরা এ ফল পেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। বাজারজাতকরণের আগ মুহূর্তে গাছে গাছে ঘণ্টা বাজিয়ে পোকামাকড় দূর করছেন।
উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল, মঠবাড়ি, বাগদি, বাইমাকান্দা, নগরভেলা, পানজোরা, সেনপাড়া এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ হচ্ছে। এবার কম বৃষ্টি আর ছত্রাকের আক্রমণে গতবারের তুলনায় হয়েছে কম ফলন। তবে আগেভাগে স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে পুরো বাগান বিক্রি করে দেওয়ায় খুশি লটকন চাষিরা। আগে বাগান কিনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় কেবল ব্যাপারীরা।
গাজীপুরের কালিগঞ্জ ছাড়াও শ্রীপুরের পিরুজালি ও কাপাসিয়া এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করে আসছেন চাষিরা।
উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বাইমাকান্দা গ্রামের লটকন চাষি মুনসুর আলী জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া বেশি গরম থাকায় ফলন কম হয়েছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিলে আগামীতে উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
একই ইউনিয়নের নগরবেলা গ্রামের ফল ব্যাপারী আয়াত উল্লাহ জানান, গত বছর লটকনের ব্যবসা করে বেশ লাভবান হয়েছিলেন। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটির চাহিদা দেখে এবার বেশি বাগান কিনেছেন তিনি। কিন্তু সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনে তিনি লটকনের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। মানুষের চলাচল না থাকলে ফল কিনবে কে?
স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে বিভিন্ন মৌসুমি ফল কিনে বাজারে বিক্রি করেন ফল ব্যাপারী তালুকদার শাওন। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর লটকন কেনাবেচা করে লাভবান হই। সেই আশায় এবার প্রায় ৩ লাখ টাকার লটকন বাগান কিনেছি। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে লাভ তো দূরের কথা, আসল নিয়ে শঙ্কায়।’
আরেক ফল ব্যাপারী শরাফত হোসেন বলেন, এবার তিনি চারটি লটকন বাগান কিনেছেন। কিন্তু বাজারে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। বাগানে গাছেই পেকে নষ্ট হচ্ছে লটকন।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার নাগরী ইউনিয়নের বাইমাকান্দা গ্রামের একটি লটকন বাগানে কথা হয় মো. নাজমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছি লটকন বাগানে। যাওয়ার সময় বাড়ির জন্য লকটন কিনে নিয়েছি। কারণ গত বছরের তুলনায় এ বছর লটকনের দাম একটু কম।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম জানান, ‘ক্রেতার অভাবে লটকন বিক্রি হচ্ছে না এমন তথ্য আমরা পাইনি। লকডাউনেও কৃষিপণ্য বিক্রির অনুমতি রয়েছে। লটকন বাগানের মালিকরা যদি আশপাশের বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে চান, সেক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হবে। লকডাউনে এমনিতেই জনসমাগম কম। তাই ছোট বাজারে ক্রেতা কম থাকায় লটকন বিক্রি কম হতে পারে।’
তিনি আরো জানান, উপজেলায় লটকন চাষের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে গত বছর ৩ হেক্টর জমিতে ৫ টন লটকন আবাদ হয়েছিল। উপজেলার নাগরী ইউনিয়নে লটকন চাষ বেশি হলেও জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের কিছু কিছু জায়গায় লটকন চাষ হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু চাষ হচ্ছে।
স্থানীয় বাজারে লটকন আকারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে।