বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যন্ত্রের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে কৃষি

  •    
  • ১৫ জুলাই, ২০২১ ০৮:৪৪

গত ১০ বছরে সরকারি হিসাবেই প্রায় ৬৯ হাজার কৃষিযন্ত্র গ্রহণ করেছে কৃষক। এসব যন্ত্রে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য সরকারের ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে।

২০০৮ সালে ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র কেনেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন গ্রামের মো. শহিদ। শিঙাড়া ও চপের দোকান বাদ দিয়ে এই মেশিনে তার ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। গ্রামের কৃষকরা তখন শহিদের কাছে ভোর রাত থেকেই সিরিয়াল নিতে যেত। এভাবেই ধানের মৌসুমে গ্রামের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় শহিদ তার মেশিন নিয়ে ধান মাড়াইতে ব্যস্ত থাকতেন।

দিন বদলের সঙ্গে শহিদ আরও অনেক কৃষিযন্ত্র কিনতে থাকেন। এখন শহিদের ছেলে বাবার কৃষিযন্ত্রগুলো দেখভাল করেন। তবে এখন শুধু শহিদ না, গ্রামের অনেকেই কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।

সারা দেশে এখন গবাদিপশুতে টানা লাঙল উঠে গেছে। কাস্তে দিয়ে ধান কাটার প্রচলনও কমে আসতে শুরু করেছে। ধান মাড়াইয়ের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। কৃষিকাজে জায়গা করে নিচ্ছে যন্ত্র।

গত ১০ বছরে সরকারি হিসাবেই প্রায় ৬৯ হাজার কৃষিযন্ত্র গ্রহণ করেছে কৃষক। এসব যন্ত্রে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।

কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য সরকার ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প নেয়, যেটির তৃতীয় ধাপ ২০২০ সালে শুরু হয়। শেষ হবে ২০২৪ সালে।

এ বছর প্রস্তাবিত বাজেটেও গুরুত্ব পেয়েছে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ। কৃষকদের কৃষিযন্ত্রের ওপর ৫০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সহায়তার মাধ্যমে কম দামে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরকারি হিসাবে ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৬৯ হাজার ৮৬৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টর, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে। তা ছাড়া, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৬১ জেলায় ৫০ একর করে হাইব্রিড বোরো ধানের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে।

তবে এর ভিন্ন চিত্রও আছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ হলেও তা দেশের সব কৃষকের হাতের মুঠোয় আসেনি। দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকদের যন্ত্রের মাধ্যমে চাষের আওতায় আনতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তা অনেক ক্ষেত্রে সফল হচ্ছে না।

কী বলছেন কৃষকরা

দেশের হাওরভুক্ত সাত জেলায় এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে। এটি দেশের মোট আবাদের প্রায় ২০ শতাংশ। আর শুধু হাওরে আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে।

তবে এবার বোরো কাটতে কৃষকের কোনো সমস্যা হয়নি। বর্ষার আগেই ঘরে ধান তুলেছে কৃষক। এখানে বড় ধরনের অবদান রয়েছে যান্ত্রিকতানির্ভর কৃষিতে।

নেত্রকোণার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরি উপজেলা সদরের কৃষক শফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি হাওরে এক ফসলি জমিতে বোরো আবাদ করে আসছেন।

তিনি বলেন, ‘এত দিন ধৈর্য্য ধরে হাওরে সনাতনী পদ্ধতিতে আবাদ কইরা আইছি। কিন্তু প্রায় তিন বছর কৃষিকাজে কিছু কিছু যন্ত্রের ব্যবহার করতাছি। সেচ দিতাছি মর্টার (ইঞ্জিনচালিত সেচযন্ত্র) দিয়া। এইবার ধানও কাটছি মেশিনে। এতে তাড়াতাড়ি কম ট্যাহায় ধান কাটতাম পারছি। এইবার আমরার হাওরে ধান কাটার লাইগ্যা অনেক মেশিন আছিল। ভাড়ায় কাটাইছি। সরকারেও কিছু মেশিন হাওরে পাঠানোর ব্যবস্থা করছিল। এতে আমরা উপকার হইছে।’

একই উপজেলার আদমপুর গ্রামের কৃষক আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘অহন হাল দেয়ার মেশিন, সেচের মেশিন, ধান কাটনের মেশিন সবই ভাড়ায় পাওয়া যায়। খরচ কম অয়। এইবায়েই ফসল মাড়াইতাছি।’

তবে প্রান্তিক চাষিরা বলছেন ভিন্ন কথা। কলমাকান্দা উপজেলার কৃষক মনতোষ বিশ্বশর্মা বলেন, ‘আমরা ছুডু চাষি। এত যন্ত্রের ব্যবহার করতে পারি না। গরু, লাঙলই আমরার ভরসা। যন্ত্র কিনার মতো ট্যাহা নাই। আগেও যেইবায় চাষ করতাম অহনও হেইবায়ই ফসল করতাছি। সরকারে আমরার কাছে যন্ত্রপাতি পৌঁছাইয়া দিলে আমরার তো উপকারই হতো।’

দেশের বোরো ধানের ভান্ডারখ্যাত সুনামগঞ্জ। এই জেলাতে জেলার প্রায় আড়াই লাখ চাষি পরিবার বোরো চাষে জড়িত। হাওর থেকে বছরে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়।

একই সঙ্গে করোনাকালে হাওর এলাকার শ্রমিক সংকট মোকাবিলা করে কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুত ফসল কেটে আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা সম্ভব হয়েছে। খামার যান্ত্রিকীকরণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং মূল্য শৃঙ্খল ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করে একটি আধুনিক কৃষিব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে এমনটা জানিয়েছে সরকার।

কী পরিমাণ ভর্তুকি

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সরকার ২০০৯-২০১৩ সালে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এবং ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ৩৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে খামার যান্ত্রিকীকরণের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ৩৩৮টি ও ২৫ হাজার বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র কৃষকদের সরবরাহ করেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি সারা দেশে ৫০ শতাংশ ও হাওর-উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দপ্রাপ্ত ২০৮ কোটি টাকার মাধ্যমে সারা দেশে ১ হাজার ৭৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার, ৩৭৯টি রিপার, ৩৪টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারসহ প্রায় ২ হাজার ৩০০টি বিভিন্ন ধরনের কৃষিযন্ত্র কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৬৮০ কোটি টাকা।

মন্ত্রী কী জানালেন

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে জানালেন ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে অঞ্চলভেদে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষকদের কৃষিযন্ত্র দেয়া হচ্ছে।

‘আমরা তো চাচ্ছি যে বাংলাদেশে কী পরিমাণ কৃষিযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, যন্ত্রগুলোর অবস্থা কী, কোন কোন কোম্পানি যুক্ত আছে, সেগুলোর পারফরম্যান্স কেমন। আমরা তো সেখানে ভর্তুকি দিতে চাচ্ছি। সেই প্রণোদনা যেন সঠিকভাবে ব্যবহার হয়। আমাদের দেশীয় অনেক কোম্পানি ভালো ভালো যন্ত্র বানাচ্ছে। সেগুলোকে আমরা সহযোগিতা করতে চাই।’

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা অফিশিয়ালি একটা অর্ডার দেব। খুব তাড়াতাড়ি যা দুই-এক দিনের মধ্যেই সারা বাংলাদেশে একটা ইনভেনটরি করে দেয়া হবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কোথায় আমরা আছি। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারব যেসব যন্ত্রের পার্টস দেশে তৈরি হচ্ছে সেগুলো যেন বাইরে থেকে আনতে না হয়। এগুলো যাতে রিপেয়ারের ব্যবস্থা থাকে। এ জন্য আমরা নতুন নতুন ওয়ার্কশপ করার চেষ্টা করব। সেখানে সহযোগিতা দেব।’

মন্ত্রী হাওর এলাকার বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের হাওর এলাকাতে বেশি পরিমাণ যন্ত্র যাচ্ছে। ওখানে মেরামতের ওয়ার্কশপ করা দরকার। আর সেই ব্যাপারেও আমরা সচেতন।’

একটি অ্যাপের মাধ্যমে হারভেস্টরের মতো বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। বলেন, ‘এর মাধ্যমে মানুষ তথ্য পাবে। যেমন হাওরে আমরা গত বছর নীলফামারী থেকে ট্রাকে করে কম্বাইন্ড হারভেস্টর এনে নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জে পৌঁছে দিয়েছি। অ্যাপ থাকলে আমরা জানতে পারব, কোথায় কী আছে। শ্রমিকদের বিষয়ে হেল্প করতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর