মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন আব্দুল মান্নান মোল্লা। তিনি একজন ব্যবসায়ী। নওগাঁ শহরের আলুপট্টিতে তার আড়ত রয়েছে। ব্যবসার পাশাপাশি পশু পালনের শখ তার।
এই শখ থেকেই পাঁচ বছর আগে গাড়ল পালন শুরু করেন তিনি। এর আগে নেন প্রশিক্ষণ। মালশন গ্রামে বাড়ির পাশে করেন গাড়লের খামার।
গাড়ল রাজশাহী অঞ্চলের একটি ভেড়ার জাত। দেখতে ভেড়ার মতো লাগলেও আকারে ভেড়ার চেয়ে কিছুটা বড়। এগুলো আসলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুর অঞ্চলের ছোট নাগপুরি জাতের ভেড়ার সঙ্গে দেশি ভেড়ার ক্রস ব্রিড। এই ক্রস ব্রিডের নামকরণ করা হয় ‘গাড়ল’। এরা সাধারণত সাত থেকে আট মাস পরপর একটি করে বাচ্চা দিয়ে থাকে।
মেহেরপুর থেকে ৪০টি গাড়ল কিনে ২০১৬ সালে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে খামার শুরু করেন উদ্যোক্তা আব্দুল মান্নান। গাড়ল কিনতে তার খরচ হয় তিন লাখ টাকার মতো। আর খামারসহ অবকাঠামো তৈরিতে খরচ হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। ঘাসের চাহিদা মেটাতে আড়াই বিঘা জমিতে লাগান নেপিয়ার ঘাস।
মান্নানের গাড়ল খামার দেখে স্থানীয় অনেক যুবক পরিকল্পনা করছেন খামার করার। প্রায় প্রতিদিনই আশপাশের অনেকে তার খামার দেখতে আসেন।
স্থানীয় রানা সরদার নামের এক যুবক জানান, মান্নান ভাই একজন পরিশ্রমী মানুষ। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি একজন সফল গাড়ল খামারি।
মান্নানের প্রতিবেশী ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘চার থেকে পাঁচ বছর আগে গাড়ল খামার শুরু করেছিলেন মান্নান ভাই। তার খামারে এখন ৫০টির মতো গাড়ল আছে। গাড়লগুলোকে দেখি প্রতিদিন খুব যত্ন করা হয়। এ রকম খামার করতে আমারও ইচ্ছা করে।’
উদ্যোক্তা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পশু পালনের ওপর এক মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ল পালনের ওপর কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না।’
‘প্রথমে যে খামারটি করেছিলাম মাচা না থাকায় বর্জ্যে ঘরের মধ্যে গ্যাস হয়েছিল। এ ছাড়া পশুগুলোর ঠান্ডাও লেগেছিল। এতে ছয় মাসের মধ্যে রোগবালাই হয়ে অনেক গাড়ল মারা যায়। শেষ পর্যন্ত ১৩টি বেঁচে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পশু ডাক্তার দেখিয়ে তেমন কোনো সুফল না পাওয়ায় খুব হতাশ হয়ে যাই। এ জন্য প্রথম দিকে লোকসানও গুনতে হয়েছিল। তবে এখন কোন মৌসুমে কী ধরনের সেবাযত্ন নিতে হবে; কখন কী ধরনের ভ্যাকসিন দিতে হবে দিনে দিনে সেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।’
মান্নান জানান, খামারে বর্তমানে ৫০টি গাড়ল আছে। এর মধ্যে বাচ্চা আছে ১৪টি। কোরবানির ঈদ ঘিরে আটটি খাসি গাড়ল প্রস্তুত করা হয়েছে।
পশুর দাম নিয়ে মান্নান বলেন, ‘প্রকারভেদে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাম ধরা হয়েছে। এ ছাড়া তিন একর জমির ওপর প্রজেক্ট করে আমি ছাগল ও গরু পালনের সিদ্ধান্তও নিয়েছি। তবে অনভিজ্ঞতার কারণে ছাগলের চেয়ে গাড়ল পালনই অনেক সহজ বলে মনে হয়।’
মান্নানের খামারে বর্তমানে চারজন কর্মচারী আছেন। কর্মচারী আব্দুল মতিন বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে এ খামারে কাজ করছি। সারা বছরই এখানে কাজ থাকে। অন্য কোথাও কাজ করার প্রয়োজন হয় না। এখানে কাজ করে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে যায়।’
কর্মচারী আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আগে বেকার ছিলাম। প্রায় দুই বছর ধরে মান্নান ভাইয়ের খামারের গাড়লগুলোকে মাঠে নিয়ে যাই। তাদের খাবার দেয়াসহ দেখাশোনা করি। এর জন্য আমাকে মাসে ৮ হাজার টাকা দেয়া হয়। যা দিয়ে আমার সংসার খরচ চলে। এখানে কাজ পেয়ে আমার কর্মসংস্থানের একটা সুযোগ হয়েছে।’
রাণীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম জানান, মান্নানের খামারে উন্নত জাতের ৫০টি গাড়ল রয়েছে। উপজেলার অন্য কোনো স্থানে এত বেশি গাড়ল পালন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে তার খামারটি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। আগামীতে ছাগলের বিকল্প হিসেবে গাড়ল চাষে খামারিদের বেশি উদ্বুদ্ধ করা হবে।’