কোরবানির ঈদে চড়া দামে গরু বিক্রির প্রচলিত কৌশল আকর্ষণীয় নামে পশুগুলোর নামকরণ। প্রতিবারের মতো এবারের ঈদ সামনে রেখেও এ কৌশলে এগোচ্ছেন খামারি-বিক্রেতারা।
টাঙ্গাইলে ‘ডিপজল’ ও ‘শাকিব খান’ নামের দুটি গরু নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। কাছাকাছি জেলা ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে আলোচনায় এসেছে বাহাদুর নামের দুটি গরু।
এর মধ্যে গাজীপুরেরটির নাম ‘বিগ বাহাদুর’। ময়মনসিংহের গরুটির নাম ‘ভালুকার বাহাদুর’। এই দুই বাহাদুরের মধ্যে হাটে কার দাম বেশি হবে, তা নিয়ে চলছে নানান আলোচনা।
গাজীপুরের ‘বিগ বাহাদুর’
কালো রং আর সুঠাম দেহ। চার-পাঁচজন মিলেও আটকানো মুশকিল বিগ বাহাদুরকে। শখের বসে করা খামারে বিগ বাহাদুরকে যত্নে বড় করেছেন খামারি।
গাজীপুরের কাশিমপুরে জসিম ডিজিটাইল ডেইরি ফার্মে সাড়ে তিন বছর ধরে লালন-পালন করা হয়েছে তাকে। বিগ বাহাদুরের ওজন এখন ২৭ মণ ছাড়িয়েছে। দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ১১ ইঞ্চি; উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি।
গত বছর কোরবানিতে তার দর ওঠে ৮ লাখ। কিন্ত গত বছর নানা কারণে বিগ বাহাদুরকে অন্যের হাতে দেয়া হয়নি। এ বছর বাহাদুরের দাম উঠেছে ১৩ লাখ।
বিগ বাহাদুরকে পরিচর্যাকারী খামারের কর্মচারী মোহাম্মদ মোস্তফা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় চার বছর ধরে আমি বিগ বাহাদুরকে বড় করছি। নিজের থাইকা এটারে বেশি যত্ন করছি। এটা নিজের হাতের গড়া। এটা এই ফার্মের সেরা গরু।
‘গত বছর ৮ লাখ টাকা দাম কইছে। কিন্তু আমি বিক্রি করতে দিই নাই। এটার প্রতি একটা আমার মায়া হইয়ে গেছে। যেহেতু বড় গরু পালাটা একটু ঝুঁকি, তাই এ বছর স্যার এটারে বিক্রির করার সিদ্ধান্ত নিছে। ১৩ লাখ টাকা হইলে আমরা গরুটা বিক্রি কইরা দিবো।’
খামারের মালিক আলহাজ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিবছর আমার বেশ কয়েকটা গরু কোরবানি দিতে হয়। হাট থেকে আনলে বেশির ভাগ সময় অসুস্থ গরু পাই। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করে গরু বিক্রি করে।
‘পরে আমি ভাবলাম যে, আমি নিজে খামার দিবো। সেই খামারের সুস্থ গরু আমি নিজে কোরবানি দিবো। আমর আত্মীয়স্বজনও আমার খামার থেকে গরু কিনে কোরবানি দিবে। এই চিন্তা থেকেই খামার করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার খামারের সেরা গরু বিগ বাহাদুর। আমরা ওকে খড়, ঘাস, ভুট্টা, সয়াবিন এসব খাইয়ে প্রাকৃতিকভাবে বড় করেছি। বাহাদুর দেখতে যেমন, শক্তিও অনেক বেশি। তবে বেশি মোটার কারণে ওকে বাড়তি খেয়ালে রাখতে হয়।’
ময়মনসিংহের ‘ভালুকার বাহাদুর’
কপালে সাদা আর সারা শরীর কালো রঙের ষাঁড়টি এবার ময়মনসিংহের ভালুকায় সবার নজরে এসেছে। নাম তার ‘ভালুকার বাহাদুর’। এরই মধ্যে দূর থেকে প্রতিদিনই ষাঁড়টি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে অসংখ্য মানুষ; চলছে দামাদামি।
উপজেলার ১০ নম্বর হবিরবাড়ী ইউনিয়নের সিডস্টোর এলাকার পশ্চিমপাড়া বাইতুল নূর জামে মসজিদে ইমামতি করেন মিজানুর রহমান। মসজিদের পাশে নিজ বাসার সঙ্গে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। সেখানে ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টি তিন বছর লালনপালন করে বড় করে তুলেছেন।
এই বাহাদুরের উচ্চতা ৫ ফুট, চওড়ায় ১১ ফুট, দাঁত ৬টি আর ওজন ২২ মণ। সবসময় প্রাকৃতিক খাদ্য খাইয়ে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে একে।
মালিক মিজানুর রহমান এর দাম হাঁকছেন ১০ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, ‘আমার খামারে বর্তমানে দুটি ষাঁড় ও একটি গাভি রয়েছে। নিজস্ব গাভি থেকে জন্ম নেয়া এই ষাঁড়টি তিন বছরে সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় হওয়ায় নাম দিয়েছি ভালুকার বাহাদুর।
‘সকলের নজরে এসেছে ষাঁড়টি। আমি দাম চাইছি ১০ লাখ টাকা। ৬ লাখ পর্যন্ত দাম উঠছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ষাঁড়টি পরিবারের একজন সদস্যের মতো আদর-যত্ন করে বড় করেছি। বিক্রি করলে মায়া লাগবে। সংসার চালাতে প্রতিদিন ৫০০ টাকা খরচ না হলেও এই ষাঁড়টির পেছনে প্রতিদিন ৫০০ টাকার ওপর খরচ হয়।’
ত্রিশাল উপজেলা থেকে আসা নাজমুল হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘ষাঁড়টির গায়ের রং আর ওজন আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তবে দামটা একটু বেশি মনে হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলে মালিককে দাম জানাব।’
এই ষাঁড়টিকে নিয়মিত চিকিৎসা দেন স্থানীয় পশু চিকিৎসক চিত্তরঞ্জন দাস।
তিনি বলেন, ‘ষাঁড়টি খড়, ঘাস, ভুসি ও দেশীয় খাদ্য ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ানো হয় না। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে ফোন করলে ষাঁড়ের চিকিৎসাসহ মালিককে পরামর্শ দিয়েছি। আমি জানি ষাঁড়টির শরীরে কোনো ধরনের রোগ নেই।’