বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুদিন হারাচ্ছে মিরকাদিমের ধবল গরু

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৩ জুলাই, ২০২১ ১৩:৫১

পুরান ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা ঈদের কয়েক মাস আগেই চলে আসেন গরু কিনতে মিরকাদিমে। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু পছন্দ হলে আগাম কিনে ফেলেন। ঈদ পর্যন্ত গৃহস্থদেরই গরু পালনের দায়িত্ব ও খরচ দিয়ে যান তারা।

এক সময় মিরকাদিমের ঘরে ঘরে গরু লালন-পালন হতো। এখন খামারি ডজন খানেকে এসে ঠেকেছে।

ধলেশ্বরী ও ইছামতির তীরে অবস্থিত মুন্সীগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভা। পৃথক দুটি নদীর তীরবর্তী এ মিরকাদিমে দুটি জাতের গরুর সুখ্যাতি- ধবল ও বুইট্টা। তবে লোকে ধবল গরুর কথাই বেশি জানে।

এ বছরও ঈদকে সামনে রেখে উভয় জাতের গরু লালন-পালন করছে মিরকাদিমের খামারিরা। পাশাপাশি নেপালি, হাঁসা, পশ্চিমা ও সিন্ধি জাতের গরু পাওয়া যায় মিরকাদিমে।

মিরকাদিমের গরু মুন্সীগঞ্জের কোথাও বিক্রি হয় না। এর প্রধান বাজার হলো ঢাকার রহমতগঞ্জের হাট, এক সময় যেটার নাম ছিল গনিমিয়ার হাট। মাত্র এক সপ্তাহের জন্য বসে এ হাট। তাতেই এক সময় হাজার তিনেক গরু বিক্রি হয়ে যেত। এখন শখানেকও হয় না।

মিরকাদিমের গরুর কদর ও দাম বেশি। ৮০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হয়।

স্থানীয় খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশেষ কৌশলে পালন করায় এসব গরুর গোশত সুস্বাদু হয়। সাধারণত খৈল, ভুষি, খুদ ইত্যাদি খাওয়ানো হয়। স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য গরুগুলোর বিশেষ যত্ন নেয় খামার মালিকরা।

মিরকাদিম পৌরসভার গিয়ে দেখা যায়, রামগোপালপুর ও এনায়েতনগর গ্রামে গরু পরিচর্যা করছেন খামারিরা।

ক্রমাগত লোকসান ও গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারের সংখ্যা কমে আসছে।

পুরান ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা ঈদের কয়েক মাস আগেই এখানে চলে আসেন গরু কিনতে। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু পছন্দ হলে আগাম কিনে ফেলেন। ঈদ পর্যন্ত গৃহস্থদেরই গরু পালনের দায়িত্ব ও খরচ দিয়ে যান তারা। ফলে কোরবানির হাটে ওঠার আগেই অনেক গরু বিক্রি হয়ে যায়।

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলো এখনও মিরকাদিমের গরু কোরবানিকে পারিবারিক ঐতিহ্য মনে করে থাকেন।

গরু খামারিরা জানান, অন্যান্য অঞ্চলেও বুইট্টা গরু পাওয়া গেলেও মিরকাদিমের বুইট্টা গরুর বৈশিষ্ট্য আলাদা। আকারে ছোট হলেও এই গরুর চেহারা দেখলেই বোঝা যায়, এটি বিশেষ জাতের। এর বাহ্যিক অবয়ব তেলতেলে ও গোলাকৃতির হয়। গোশত মোলায়েম ও সুস্বাদু। এছাড়া নেপালি গরুর উচ্চতা বেশি। সিন্ধি অনেক রঙের হলেও পশ্চিমা আর হাঁসা গরু সাদা রঙের। সাদা এসব গরুর উচ্চতা সবচাইতে বেশি।

কোরবানির ঈদের ছয় থেকে সাত মাস আগে থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট ও বাছাই করা গরু কিনে আনেন খামারিরা।

মিরকাদিম অ্যাগ্রোর মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘অনেক দিন এ পেশা থেকে সরে ছিলাম, এখন আবার গেল দুই বছর ধরে নিয়মিত গরু পালন করছি। সাদা ও বুইট্টি গরু হলো চয়েজের উপর বিক্রি। এটার দাম বলতে কিছু নেই। বুইট্টা গরু দেখতে অনেক সুন্দর আর এই সৌন্দর্যের উপরেই দাম হাঁকানো হয়। এক একটা বুইট্টা গরুর দাম ৮০ হাজারেও বেশি হয়ে থাকে।’

বিল্লালের খামারে এবার আটটি বুইট্টা গরু। দাম ভালো পেলে আগামীতে তিনি গরুর সংখ্যা বাড়াবেন।

গত বছর করোনার কারণে এখানকার খামারিদের লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারও করোনার প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত তারা। খামারিরা মনে করছেন, ভারতীয় গরু না এলে তাদের লোকসান গুনতে হবে না।

বিল্লাল জানান, গোখাদ্যের দাম বাড়ার কারণে গরু লালন-পালন করে তাদের হাতে কিছুই থাকছে না।

খামারি ইমন বেপারী বলেন, ‘মিরকাদিমে আগে প্রচুর খামারি বুইট্টা ও ধবল গরু লালন পালন করত। ধীরে ধীরে তারা অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে যাচ্ছেন। কারণ লোকসান হলে অনেককে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে হয়।’

ইমন ব্যাপারীর খামারে ৭০টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে বুইট্টা গরু রয়েছে ২০টি। ধবল রয়েছে ৩০টি মতো। তারা দুই ভাই মিলে গরু পরিচর্যা করেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কুমুদ রঞ্জন মিত্র জানান, মিরকাদিমের খামারিরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাদা গরু সংগ্রহ করে লালন-পালন করেন। ঈদে রহমতগঞ্জ হাটসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন।

ইদানিং গো-খাদ্যের দামের জন্য গরু পালতে অনেকে খামারির আগ্রহ কমে যাচ্ছে, এটা স্বীকার করে কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারিদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কীভাবে কম খরচে প্রাকৃতিকভাবে গরু মোটাতাজা করা যায়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে খামারিরা লাভবান হতে পারবে।

এ বিভাগের আরো খবর