হরেক নাম আর দামের কারণে প্রতিদিনই খবরের পাতায় জায়গা পাচ্ছে কোরবানির গরু। প্রতিবেদনে গুরুত্ব পাচ্ছে তাদের ওজন, খাবার উপকরণ, বয়সসহ আরও অনেক কিছু।
নামের কারণে আলোচনায় উঠে এসেছে টাঙ্গাইলের দুটি গরু। তাদের একটির নাম ‘শাকিব খান’; অন্যটি ‘ডিপজল’।
ভালোবেসে তাদের এই নাম দিয়েছেন খামারের ব্যবস্থাপক মো. আলমাস।
তিনি বলেন, “সাদা রঙের ষাঁড়ের নাম রাখা হয়েছে ‘শাকিব খান’ আর কালো গরুর নাম ‘ডিপজল’। নামের সঙ্গে তাদের আচরণের মিল রয়েছে। ডিপজল একটু বেপরোয়া। সবাই তাকে সমীহ করে চলে।”
দুটি ষাঁড়ই লম্বায় সাত ফুট। তবে ওজনে একটু তারতম্য রয়েছে। শাকিবের ওজন প্রায় ৩০ মণ; ডিপজলের ওজন প্রায় ৩১ মণ। ওজনে কম হলেও শাকিবের দাম হাঁকা হচ্ছে বেশি।
শাকিব খান ও ডিপজল ফ্রিজিয়ান জাতের গরু। বয়স তাদের দুই বছর সাত মাস। দুটি ষাঁড়ই দুই দাঁতের। তাদের লালন-পালন করা হচ্ছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার মিরিকপুর গ্রামের কলেজছাত্র তরুণ উদ্যোক্তা জোবায়ের ইসলাম জিসানের খামারে। পশু দুটি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু বলে দাবি করেন জিসান।
ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুর নাম রাখা হয়েছে শাকিব খান। ছবি: নিউজবাংলাআড়াই বছর আগে তরুণ উদ্যোক্তা জিসানের খামারেই জন্ম হয় ষাঁড় দুটির। এরপর থেকে দেশীয় খাবার খাইয়ে তাদের লালন-পালন করা হচ্ছে।
চলচ্চিত্র তারকার নামে পশু দুটির নাম হওয়ায় তাদের দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছেন। মাঝেমধ্যে আসছেন ক্রেতারাও।
জিসান বলেন, ‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরামর্শে কোনও ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার ছাড়াই দেশীয় খাবার খাইয়ে গরু দুটিকে লালন-পালন করেছি। ৩০ মণ ওজনের শাকিবের দাম ১৩ লাখ এবং ৩১ মণ ওজনের ডিপজলের দাম ১২ লাখ চাচ্ছি। তবে আলোচনা সাপেক্ষে কম টাকায় বিক্রি করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের শেষের দিকে আমার পরিকল্পনায় তিনটি গাভী দিয়ে খামারটি শুরু করা হয়। বর্তমানে খামারে ২৫টি ষাঁড় ও গাভী রয়েছে। এদের মধ্যে ছয়টি ষাঁড় মোটাতাজা করা হয়েছে। আমার অবর্তমানে বাবা শফিকুল ইসলাম খামারটি দেখাশোনা করেন। এ ছাড়া খামারে একজন কর্মচারী রয়েছে।’
খামারের মালিক শফিকুল বলেন, অনেকেই গরুগুলো দেখতে আসছেন। এসে দামাদামিও করেছেন। কিন্তু এখন লকডাউন। তাই অনেক ক্রেতাই আসতে পারছেন না। যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে পশু বিক্রি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে।
জিসানের মা মেরিনা জেসমিন জুলি বলেন, ‘ষাঁড় দুটিকে সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করেছি। সবাই যখন ওদের দেখতে আসে, খুব ভালো লাগে। মনে প্রশান্তি আসে। ওদের খুব যত্ন করে খাবার খাইয়েছি। কোনো ধরনের আজেবাজে বা ক্ষতিকারক খাবার খাওয়াইনি, যা মানুষের শরীরের ক্ষতি হবে।’
৩১ মণ ওজনের ডিপজলের দাম ১২ লাখ হাঁকানো হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলাপশু দেখতে আসা শাজাহান বলেন, ‘এত বড় গরু এবং নামের জন্যই দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম নামের সঙ্গে তাদের অনেকটাই মিল রয়েছে। ভালোই লাগল দেখতে। আসাটা সার্থক হয়েছে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রৌশনী আকতার বলেন, ‘জিসানের খামারে দেশীয় খাবার খাইয়ে ষাঁড় দুটিকে লালন-পালন করা হচ্ছে। আমরা ষাঁড় দুটিকে নিয়মিত দেখাশোনা করছি। উপজেলায় এই ষাঁড় দুটিই সবচেয়ে বড়।’
তিনি আরও বলেন, ‘খামারিদের কাছ থেকে শুনেছি সিনেমার নায়ক এবং ভিলেনের নামে নামকরণ করা হয়েছে ষাঁড় দুটির। আমাদের কোরবানির পেজে তাদের বিক্রির জন্য ছবি এবং দাম লিখে দিয়েছি। লকডাউন চলমান থাকলে অনলাইনের মাধ্যমেই যেন ষাঁড় দুটির বেচাকেনা হয়।’