শাটডাউনে হাঁড়িভাঙ্গা আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রংপুরের চাষিরা। আম বিক্রির মোক্ষম সময়ে পাইকার না থাকায় দাম পড়ে গেছে। বিপুল পরিমানে আম নিয়ে বসে আছেন চাষীরা। সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেকে।
রংপুর কৃষি বিপনন বিভাগের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ২০ জুন হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারজাতকরণ উদ্বোধন করেন।
আমের ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পেয়ে খুশি হয়েছিলেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বৃৃহস্পতিবার দেশজুড়ে শাটডাউন শুরুর প্রথম দিনই হতাশায় পড়েছেন তারা।
কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর রংপুরে এক হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে সন্তোষজনক।
আম ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান রেদওয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০ জুন বাজারে আম আসার পর বেশ চাহিদা ছিল। ঢাকা ছাড়াও অন্য জেলার পাইকাররা এসে আম কেনা শুরু করেন। আমরাও প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে আম পাঠাই। দামও ছিল ভালো। হঠাৎ খবর আসে শাটডাউনের। এরপর পাইকারও কম আসছে, দামও কমতে শুরু করলো।’
তিনি বলেন, ‘ঘোষণা হল সোমবার থেকে শাটডাউনে যাবে দেশ। ফের ঘোষণা এলো বৃহস্পতিবার। পাইকাররা আসতে না পারায় আমের দাম পড়ে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে যারা বাগান কিনে রেখেছে তাদের সর্বনাশ হবে। আমি নিজেও দশ লাখার টাকায় পাঁচটি বাগান কিনেছি।’
মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জের ফেরদৌস মেম্বার বলেন, ‘গত সপ্তাহেও যে আম ২১০০ টাকা মন বিক্রি করলাম, সেই আম এখন ১৫০০ টাকাও বলে না। অথচ গত বছর এই আমের মন এই সময় তিন হাজার টাকার উপরে ছিল। বাইরের লোক না আসলে এত আম কাই খায় বাহে...। ’
আব্দুর রহমান নামে এক আম চাষি বলেন, ‘মোর আম ছাড়া আর কিছু নাই..। মুই যদি আমের দাম না পাও তাহলে পরিবার ধরি মরবের নাগবে। কি করেন করো তোমরা সরকারও কয়া আম নিয়ে যায়া বিকেন( বিক্রি করেন) । হামার লোকসান না করেন। ’
আম ব্যবসায়ী মাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আম কেনার সাহস পাচ্ছি না। কারণ, যে গাড়িত করি আম ঢাকাত নিয়ে যাই, সেই গাড়ি আসার সময় পুলিশ আটকে দেয়, মামলা দেয়। একবার মামলা দিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে। আমের গাড়ির কথা বললেও পুলিশ মানবের চায় না। তাহলে তো লাভের চেয়ে লোকসান। আম কিনি আর ঢাকাত নিয়ে যাই কেমন করি।’
আম ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমের দাম হয় কোটথাকি। এখানে রংপুরের বিভিন্ন এলাকার ছোট ছোট পাইকাররা আসি আম কিনে নিয়ে বেচায়। তামরা ( তারা) তো আসপের পাবে না...। আর মানুষ তো বাড়ির ভিতরত ওমরা আসপের পাইলেও আম বিক্রি করে কোটে। ওই আম ওমরা রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করি বেচাইচে। দিনে ওমরায় বেশি আম বিক্রি করছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে রংপুরের পদাগঞ্জে সবচেয়ে ভালো আমের মন বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। যে আম গত সপ্তাহেও ছিল ২২০০ টাকা। মাঝারি আম বিক্রি হয় ১২০০ টাকা আর ছোট আম বিক্রি এক হাজার টাকা করে।
দূরের পাইকাররা আসতে না পারায় এই দরপতন, বলছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রংপুরের জেলা প্রশাসক জানান, আমের জন্য যেসব গাড়ি ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে সেগুলো লকডাউনের আওতামুক্ত। আমের ফিরতি গাড়ি আটকানো হচ্ছে এটা জেলা প্রশাসকের জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।