বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কোরিয়ান জামে হাবিবের বাজিমাত

  •    
  • ২৮ জুন, ২০২১ ০৮:৫৭

প্রবাস থেকে ফিরে বরগুনায় কোরিয়ান জামের চাষ করেছেন আহসান হাবিব। ৪৩টি গাছের জাম তিনি এরই মধ্যে বিক্রি করেছেন ৭ লাখ টাকার বেশি। হাবিব মনে করছেন, মৌসুম শেষে বিক্রি ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বরগুনা শহর থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে সদর ইউনিয়নের হেউলিবুনিয়া এলাকা। সড়কের উত্তর দিকে তাকালে নজরে পড়বে সারি সারি গাছ।

দূর থেকে অনুমান করা যায় না কী গাছ। দেখা যায় শুধু মাঝারি আকারের এসব গাছে ছোট আকারের লম্বাটে, ডিম্বাকার কালচে-বেগুনি থোকা থোকা ফল। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে কালো আঙুরের বাগান।

কিন্তু ফলগুলো আঙুর নয়; কোরিয়ান জাম। আহসান হাবিবের বাগানে ৪৩টি গাছে ধরেছে এই জাম।

মৌসুমের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ টাকার জাম বিক্রি করেছেন হাবিব। মৌসুম শেষে প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশাবাদী।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তরুণ হাবিব ভাগ্যান্বেষণে কোরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে কৃষি খামারে কাজ করেন তিনি।

২০০৬ সালে দেশে ফেরেন হাবিব। এরপর গ্রামের বাড়ি হেউলিবুনিয়ায় হাঁস-মুরগি, মাছের পাশাপাশি ফলদ বৃক্ষের বাগান গড়ে তোলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন; গচ্চা যায় অনেক টাকা।

এরপর প্রায় ১০ একর জমিতে কোরিয়ান জাতের শতাধিক জামের চারা রোপণ করে জামবাগান গড়েন হাবিব। বছর দুয়েক পরে গাছে ফুল ধরলেও জামের দেখা মিলছিল না। তাতে একটুও হতাশ হননি তিনি। উল্টো জাম গাছের পরিচর্যায় বেশি বেশি করে সময় দিতে থাকেন। মে মাসের শুরুতে গাছগুলো জামে ছেয়ে যায়।

রোপণের তিন বছরের মাথায় ফল ধরতে শুরু করে হাবিবের গাছে। নষ্ট ও মারা যাওয়ার পর টিকে থাকে ৪৩টি গাছ।

হাবিবের জামবাগানে এবার ৪৩টি গাছেই ভালো ফলন হয়েছে।

আহসান হাবিব বলেন, ‘জামের বাগান তৈরির চিন্তা মাথায় আসে কোরিয়া থেকেই। হাঁস-মুরগির খামারে ব্যর্থ হওয়ার পর চিন্তায় পড়ে যাই, কী করা যায়।

‘অনেক ভেবেচিন্তে জামবাগান তৈরির পরিকল্পনা করি। এরপর কোরিয়ান জাতের জামের বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করে সেই চারা বাগানে রোপণ করি।’

তিনি বলেন, ‘চারার পরিচর্যা করতে তিন বছর কেটে যায়। এখন আমার বাগানে ৪৩টি গাছে জামের ফলন ধরেছে।’

হাবিব জানান, বাজারে এ জামের বেশ চাহিদা। বরগুনা ও আশপাশের জেলার পাইকাররা বাগান থেকে জাম কিনে নিয়ে যান। মৌসুমের শুরুতে ২০০ করে কেজি বিক্রি করেছেন। এখনও ১৮০ টাকা করে পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। এ ছাড়া অনলাইনে দেখেও অনেকে জাম কেনেন।

হাবিব জানান, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ টাকার জাম বিক্রি হয়েছে। এখনও গাছে যে পরিমাণ জাম আছে, তাতে বিক্রি ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

আহসান হাবিবের মেয়ে হুমায়রা আক্তার। বাবার কাজে তিনি সহযোগিতা করেন। তবে সেটা অনলাইনে।

সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রথম জাম নিয়ে পোস্ট দেন হুমায়রা। মুহূর্তের মধ্যে সেটি ভাইরাল হয়। প্রতিবেশীও সেই পোস্ট দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ৪৩টি গাছে এত জাম।

হুমায়রা আক্তার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ফলেই জামের বিষয়টি সবার নজরে আসে। এমনকি ক্রেতাদের ৯৫ ভাগ অনলাইনে কিনছেন। কেউ কেউ অনলাইন ঘেঁটে জামবাগান দেখতে আসেন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ ক ম মোস্তফা জামান বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠের শেষ থেকে আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ মিলে প্রায় ২০ দিন খাওয়ার উপযুক্ত জাম পাওয়া যায়। ব্যবসায়িক উদ্যোগে উন্নত জাতের জাম বা হাইব্রিড জামের চাষ এই অঞ্চলে হয় না।

‘তাই বাজারে পাওয়া জামের সবটাই দেশি জাতের। কিন্তু বরগুনায় যেটা হয়েছে, তা ব্যতিক্রম।’

কোথাও কোথাও কিছু থাই (থাইল্যান্ড) জামও দেখা যায় জানিয়ে তিনি বলেন, পাবনা, নাটোর, কুষ্টিয়া, যশোর, রাজশাহী ও গাজীপুরে জামের ফলন সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া প্রায় সব অঞ্চলেই কম-বেশি জাম হয়। পুষ্টি ও ঔষধি গুণসমৃদ্ধ জাম সুস্বাদু খাবার। এখন শখ করে অনেকেই ছাদবাগানে আমের পাশাপাশি জামও চাষ করেন।

হাবিবের জামের বাগানের দেখভাল করছে বরগুনার কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সময় পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি জাম বিক্রিতে সহায়তা করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।

বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাম ঔষধি জাতের একটি ফলদ বৃক্ষ। নানা প্রকার ঔষধি গুণাগুণে সমৃদ্ধ জামের বিপুল চাহিদা রয়েছে বাজারে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে জামের বাণিজ্যক চাষাবাদ হলেও দক্ষিণে এখনও প্রসার ঘটেনি।

এ বিভাগের আরো খবর