বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০ বছরে কমেছে ২ হাজার হেক্টর কৃষিজমি

  •    
  • ২০ জুন, ২০২১ ১১:০১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা বলেন, ‘কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ এসব জমিতে ইটভাটা স্থাপন, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর নির্মাণ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষিজমি। অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং উর্বর মাটি তুলে ফেলায় কমে আসছে ফসল উৎপাদনের জমির পরিমাণ। একে ত্বরান্বিত করছে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে ফসলি জমির মধ্য দিয়ে সড়ক নির্মাণ।

জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আমিন জানান, এসব কারণে গত ১০ বছরে জেলায় ২ হাজার ৩৮ হেক্টর কৃষিজমি কমেছে। এর আগে নদীভাঙনসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে যে হারে আবাদি জমি কমত, বর্তমানে বাড়ি নির্মাণ বা পুকুর খুঁড়ে মাছ চাষের কারণে তার চেয়ে বেশি হারে কমছে।

জেলার কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশে ফসলি জমি রক্ষায় কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। কৃষিজমি রক্ষায় তাই তেমন কিছু করতে পারে না প্রশাসন। এ জন্য ভবিষ্যৎ খাদ্যনিরাপত্তার কথা ভেবে নিয়মিত মনিটরিং এবং ফসলি জমি সুরক্ষায় সিটি করপোরেশন অথবা পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়ও নীতিমালা প্রণয়নের তাগিদ দেন তারা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সর্বশেষ দুই অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এক, দুই, তিন ও চার ফসলি মিলিয়ে মোট জমির পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৭৮ হেক্টর। দুই বছর আগে যা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৫ হেক্টর। মাত্র দুই বছরেই জেলায় ১ হাজার ২০৭ হেক্টর জমি কৃষি খাত থেকে অকৃষি খাতে রূপান্তরিত হয়েছে।

জেলার বিজয়নগর, আশুগঞ্জ ও আখাউড়া উপজেলায় দেখা যায়, কৃষিতে লোকসানের কারণে অনেক চাষিই এখন মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফসলি জমিতে তৈরি করা হচ্ছে বড় বড় পুকুর-দিঘি। তবে এই চিত্র সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সদর উপজেলাসহ পূর্বাঞ্চলের কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায়।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আবার অধিক মুনাফার লোভে কৃষিজমির মাটি কিনে বিক্রি করছেন। এসব মাটি দিয়ে রাস্তার পাশের জমি ভরাট করে কেউ নির্মাণ করছেন মার্কেট, কেউবা করছেন আবাসন প্রকল্প।

ধরখার এলাকার রহিম মিয়া, বিজয়নগরের ফজলু মিয়া ও আশুগঞ্জের আলমগীর মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক নিউজবাংলাকে জানান, গত ৫ থেকে ৭ বছরে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে বারবার লোকসানে পড়ায় তারা ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ জন্য কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে ফসলি জমিতে কেউ করছেন মাছ চাষ, আবার কেউ জমি ভরাট করে নির্মাণ করেছেন মার্কেট ও দালানকোঠা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অপরিকল্পিত শিল্পায়ন এবং নগরায়ণের কারণে কমে আসছে ফসলি জমির পরিমাণ। ছবি: নিউজবাংলা

এ বিষয়ে সচেতন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আবদুর নূর বলেন, ‘দেশে যেভাবে ফসলি জমি কমছে এবং যেভাবে জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, এতে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে যতই খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করুক না কেন, ভবিষ্যতে আমাদের খাদ্যঘাটতির সম্মুখীন হতে হবে।

‘এমতাবস্থায় কেউ যেন ফসলি জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ করতে না পারে, সে জন্য সরকারকে অবশ্যই কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ এসব জমিতে ইটভাটা স্থাপন, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর নির্মাণ। ছবি: নিউজবাংলা

তিনি আরও বলেন, ‘পরিকল্পনার অভাবেই দিন দিন কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। পৌরসভার মতো যদি ইউনিয়ন পরিষদেও প্ল্যান পাস করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হতো, অথবা শহরের মতো যদি গ্রামেও সামান্য একটু জায়গার মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণের মানসিকতা তৈরি হতো, তবে আমাদের দেশের ফসলি জমি এভাবে হ্রাস পেত না।’

কৃষিজমি হ্রাসের তথ্য স্বীকার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুল আমিন জানান, জেলায় কী পরিমাণ কৃষিজমি কমেছে, তার কোনো সঠিক তথ্য বা পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেই। তবে বর্তমানে জেলায় যে ইটভাটা রয়েছে, তা আগের ১০ বছরের দ্বিগুণ।

তিনি বলেন, ‘একটা ইটভাটা স্থাপন করতে পাঁচ একর জমির প্রয়োজন। সেই হিসাবে ১০০টি ইটভাটা তৈরি করতে ৫০০ একর জমির প্রয়োজন। এতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে শুধু ইটভাটা স্থাপন করতে ৫০০ একর জমি হ্রাস পেয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা বলেন, ‘কৃষিজমি হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ এসব জমিতে ইটভাটা স্থাপন, শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর নির্মাণ। কোনো কৃষিজমি যেন অকৃষি খাতে রূপান্তরিত না হয়, সে জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তিনি দাবি করেন, কৃষিজমি কমলেও জেলার খাদ্য উৎপাদনে তার প্রভাব পড়েনি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর