বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গোখাদ্যের সন্ধানে উত্তাল পদ্মা পাড়ি

  •    
  • ৯ জুন, ২০২১ ০৮:৫৭

নদী তীরবর্তী এলাকার এসব মানুষের অধিকাংশ নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীন কৃষক। সম্পদ বলতে কিছু গরু-ছাগলই তাদের সম্বল। কিন্তু নিজেদের জমি না থাকায় তারা পশু পালনে ঘাস চাষও করতে পারেন না। এ জন্য দুর্গম চরাঞ্চলে ঘাসই তাদের ভরসা।

রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় সারা বছরই থাকে গোখাদ্যের সংকট। গবাদিপশুর খাবারের উচ্চমূল্য আর এলাকায় প্রয়োজনীয় কাঁচা ঘাস না পাওয়ায় এ নিয়ে সমস্যা পোহান কৃষক-কৃষানিরা।

বর্ষায় এ সংকট কিছুটা কাটে। এ সময় পদ্মার বিভিন্ন চরে জন্মায় প্রচুর পরিমাণে কড়চা, বন, দুবলা ও বাকশীজাতীয় ঘাস। তবে দুর্গম চরের এসব ঘাস কাটতে জীবনে ঝুঁকি নিয়ে তাদের পাড়ি দিতে হয় উত্তাল পদ্মা।

স্থানীয় লোকজন জানান, নদী তীরবর্তী এলাকার এসব মানুষের অধিকাংশ নদীভাঙনের শিকার ভূমিহীন কৃষক। সম্পদ বলতে কিছু গরু-ছাগলই তাদের সম্বল। কিন্তু নিজেদের জমি না থাকায় তারা পশু পালনে ঘাস চাষও করতে পারেন না। এ জন্য দুর্গম চরাঞ্চলে ঘাসই তাদের ভরসা।

গৃহপালিত পশুর খাবার সংগ্রহ করতে তাই এখন প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন এ এলাকার শ শ নারী-পুরুষ।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় এ নিয়ে কথা হয় কৃষক ওসমান খানের সঙ্গে। তিনি জানান, তার তিনটি গাভি, একটি ষাঁড় ও চারটি ছাগল আছে। সহায়সম্পদ বলতে এগুলোই। নিজের কোনো জমিজমা নেই। সব নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, এসব গরু-ছাগল পালনে প্রচুর খাবার লাগে। খড়, কুঁড়া, ভুসির দাম অনেক। এ জন্য বর্ষা মৌসুমে চর থেকে ঘাস কেটে এনে খাওয়ান।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বাহিরচর সাত্তার মেম্বারের পাড়ার সরূপী বেগম জানান, গোখাদ্যের সংকটে নিজের দুটি গরু ও পাঁচটি ছাগলের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁচা ঘাস সংগ্রহ করে আনেন।

ঝুঁকির বিষয়ে বলেন, ‘নিজেরা ঠিকমতো খাইবার পাই না পাই, বোবা গাই-বাছুর গুলানরে তো আর ক্ষিধায় কষ্ট দিবার পারি না। তাই শত কষ্ট অইলেও ওগের জন্যি পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিয়া দুর্গম চরে যাই ঘাস আনতে।’

স্থানীয় নুরজাহান বেগম, রুস্তম কাজী, আব্দুল বেপারিসহ ২৫-৩০ নারী-পুরুষ ঘাস কাটতে যেতে উঠছিলেন একটি ট্রলারে।

তারা জানান, সকালে পান্তা ভাত বা হালকা নাশতা করে ট্রলারে ওঠেন। সঙ্গে কিছু খাবার নেন দুপুরের জন্য। সারা দিন চরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ঘাস কাটেন। ফেরেন বিকেলে।

ঝুঁকি ও কষ্ট হলেও বোবা প্রাণীগুলোর আহার জোগাতে এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই বলে জানান তারা।

ট্রলারচালক নাদের মাঝি জানান, তার মতো আরও বেশ কয়েকটি ট্রলারে প্রতিদিন অনেক নারী-পুরুষ বিশ্বনাথপুর, ভাবৈল, বনভাবৈল, চর পালন্দ, আখ পালন্দসহ বিভিন্ন দুর্গম চরে গিয়ে ঘাস নিয়ে আসেন। জনপ্রতি তারা ভাড়া নেন ৪০ টাকা।

তিনি আরও জানান, এ সময় চরে প্রচুর পরিমাণে কড়চা, বন, দুবলা ও বাকশীজাতীয় ঘাস পাওয়া যায়। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত চরগুলোতে যায়।

যাওয়ার সময় তেমন ঝুঁকি না থাকলেও ফেরার সময় অতিরিক্ত লোড থাকায় বেশ ঝুঁকি থাকে। ভরা বর্ষায় তীব্র স্রোত ও বড় বড় ঢেউয়ের কারণে এ ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর