‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’ প্রতিপাদ্যে দেশে প্রথমবারের মত আজ শুক্রবার ৪ জুন জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে চা দিবস।
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১৯টি দেশে দুই দশমিক ১৭ মিলিয়ন কেজি চা পাতা রপ্তানি হয়। এ খাত থেকে দেশে এসেছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।
চা বোর্ডের উপপরিচালক (বাণিজ্য) মুহাম্মদ মদহুল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘২০২০ সালে ১৯টি দেশে বাংলাদেশি চা রপ্তানি হয়েছে। দিন দিন চা রপ্তানি বাড়ছে। দেশেও চাহিদা বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘চা রপ্তানি আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা দিতে চা বোর্ড নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। নতুন বাজার সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের দূতাবাস ও কমার্শিয়াল কাউন্সিলরদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে।’
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চা পাতা রপ্তানি করে আবুল খায়ের কনজুমার প্রোডাক্টস, এমএম ইস্পাহানি, কাজী অ্যান্ড কাজী টি অ্যাস্টেট, হালদা ভ্যালি টি অ্যাস্টেট লিমিটেড, হাজী আহমদ ব্রাদার্স, শ ওয়ালেস বাংলাদেশ, মনির শাহ অ্যান্ড সনস, মেঘনা টি কোম্পানি, দ্য কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ পাকিস্তান, সৌদি আরব, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চা পাতা রপ্তানি করে।
চা বোর্ডের তথ্য মতে, ১৯৮০ সালে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল। অপরদিকে ২০২০ সালে ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল চা কমিটির তথ্য মতে, চীন এখন চা উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে। আর ভারত আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। বিশ্বে চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন নবম স্থানে।
চা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, জমির সঠিক ব্যবহার, কম মূল্যে সার-কীটনাশক সরবরাহ ও ক্লোনিং চা গাছ রোপণ করা নিশ্চিত করতে পারলেই চায়ের উৎপাদন আরও বাড়বে।
টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ মঈনুদ্দীন হাসান বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি চায়ের কদর বাড়ছে। দেশেও চায়ের চাহিদা বাড়ছে। তাই চা উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে নজর দিতে হবে চা বোর্ডকে।’
চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে ২২টি। এছাড়া মৌলভীবাজারে ৯২টি, হবিগঞ্জে ২৪টি, সিলেটে ১৯টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙ্গামাটিতে ২টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা বাগান রয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাগানে চাষ থেকে শুরু করে ভোক্তার কাছে পৌছানো পর্যন্ত আট থেকে দশ ধাপে চা প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এক কাপ চায়ের জন্য তুলতে হয় ১১ গ্রাম সবুজ কুড়ি।
চা বোর্ড বলছে, হবিগঞ্জের বৃন্দাবন বাগান এবার চা-প্রেমীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ভিন্ন রং ও স্বাদের চায়ের আরও দুটি জাতের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের গবেষণা কাজে লাগিয়ে এবার বাগানটিতে উৎপাদিত হয়েছে ‘হোয়াইট’ ও ‘ইয়েলো’ টি। নতুন এ দুটি জাত চা শিল্পকে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। ‘ব্ল্যাক’ ও ‘গ্রিন’ টির কয়েক গুণ বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে নতুন জাতের এ দুই চায়ে।
চা বোর্ডের উপপরিচালক (বাণিজ্য) মুহাম্মদ মদহুল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘এবার আমরা প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে চা দিবস পালন করছি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’।
আমরাও চায়ের প্রসারের জন্য কাজ করছি। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নিত্য নতুন গবেষণা ও চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে চা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আমরা মনে করি।’
১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। দেশ স্বাধীনের সময় দেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল ১৫০টি। তখন তিন কোটি কেজির মতো চা উৎপাদন হত। বর্তমানে সারাদেশে বিদেশি কোম্পানি, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ছোট-বড় মিলিয়ে চা বাগানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৬টি।