বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবন বদলালেও ন্যায্য দামের শঙ্কা

  •    
  • ৪ জুন, ২০২১ ১৯:৪১

চা-চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কিন্তু হঠাৎ করে চা-পাতার দাম ৩৮ টাকা থেকে ১৪ টাকায় নেমে আসায় তেমন আর লাভ হচ্ছে না। একেক দিন একেক দামে চা-পাতা কেনে কারখানাগুলো। এ ছাড়া চা-পাতা নেয়ার পর তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২০-৪০ শতাংশ কেটে নেয়।’

হিমালয়ের পাদদেশে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। দুই দশক আগেও পতিত অবস্থায় পড়ে থাকত জেলার বেশির ভাগ উঁচু জমি। পরে সেসব জমিতে চা চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে এই জেলার মানুষের।

ইতিমধ্যে দেশের তৃতীয় চা-অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে পঞ্চগড়।

মার্চের শুরু থেকে মৌসুমে প্রথম চা কাটা ও সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়। বাগান থেকে চাষিরা তাদের চা-পাতা কাটার পর স্থানীয় কারখানায় বিক্রি করেন। চায়ের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা স্বাবলম্বী হলেও গত দুই বছর ধরে দাম ওঠানামা করায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা।

চাষিদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া পাতার ২০-৪০ শতাংশের দাম দেন না কারখানার মালিকরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হয়। পরীক্ষামূলক চাষে সফলতার পর ২০০০ সাল থেকে শুরু হয় বাণিজ্যিক চাষ। জেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় হাজারও চা-বাগান।

২০২০ সালে চা উৎপাদনে পার্বত্য জেলা চট্টগ্রামকে ছাড়িয়ে গেছে পঞ্চগড়। জেলার পাঁচ উপজেলায় কমবেশি চা-বাগান গড়ে উঠলেও সবচেয়ে বেশি চা-বাগান রয়েছে তেঁতুলিয়ায়। সড়কের পাশে বা উঁচু পতিত জমিতে কিংবা পুকুরপাড়ে এমনকি বাড়ির আঙিনায় রয়েছে চা-বাগান। আবার কেউ কেউ সুপারি, আম, তেজপাতা বাগানের সাথি ফসল হিসেবে করছেন চায়ের চাষ।

চা বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পঞ্চগড়ে চা চাষের উপযোগী ১৬ হাজার একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ৮ হাজার ৬৪২ একর জমিতে চাষ বেড়েছে। চা চাষ বাড়ায় জেলায় গড়ে উঠেছে ১৭টি চা-কারখানা।

গত বছর পঞ্চগড়ে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক কোটি কেজি। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত উৎপাদন হয়েছে প্রায় তিন লাখ কেজি। জেলায় বর্তমানে ৯টি নিবন্ধিত চা-বাগান (টি অ্যাস্টেট), ১৬টি অনিবন্ধিত চা-বাগান, ৯৯৮টি নিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা-বাগান এবং ৫ হাজার ৫০০ অনিবন্ধিত ক্ষুদ্রায়তন চা-বাগান রয়েছে।

তেঁতুলিয়ার আজিজনগরের চা-চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার উঁচু জমিতে কোনো ফসল না হওয়ায় পতিত ছিল। পরে ওই জমিতে চা চাষ করি। ভালো দাম পাওয়ায় আমি অনেক লাভবান হয়েছি এবং নতুন করে বাগান লাগিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘কিন্তু হঠাৎ করে চা-পাতার দাম ৩৮ টাকা থেকে ১৪ টাকায় নেমে আসায় তেমন আর লাভ হচ্ছে না। একেক দিন একেক দামে চা-পাতা কেনে কারখানাগুলো। এ ছাড়া চা-পাতা নেয়ার পর তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ২০-৪০ শতাংশ কেটে নেয়।’

সদর উপজেলার অরখানা মডেলহাট এলাকার চাষি শাহরিয়ার হোসেন শুভ বলেন, ‘কারখানাগুলো তাদের মনগড়া দামে পাতা সংগ্রহ করে। এতে আমাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। পঞ্চগড়ে একটি চায়ের অকশন বাজার করলে আমরা ন্যায্য দাম পাব।’

গ্রিন কেয়ার চা কারখানার ম্যানেজার মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, ‘চা চাষে কৃষকদের পাশাপাশি শ্রমিক ও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, এটি সত্য নয়। চা-পাতার দাম অকশন বাজারের ওপর নির্ভর করে৷ এক কেজি চায়ের অর্ধেক পাবে কৃষক আর অর্ধেক পাবে কারখানা। সেই অনুযায়ী চায়ের মূল্য নির্ধারণ হয়।’ পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান হাসনুর রশিদ বাবু বলেন, ‘সমতলের চা দার্জিলিংয়ের চা-কেও হার মানায়। চা চাষ করে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বেকার ও শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। তবে অকশন বাজার দূরে হওয়ায় কৃষকরা চা-পাতার দাম তেমন পান না।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চায়ের বাজার স্থিতিশীল থাকলে পঞ্চগড়ের চা-শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতিমধ্যে চা চাষ করে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। বেকার ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’

নর্দান বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, ‘পঞ্চগড়ের চা দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও রপ্তানি হয়। চা-চাষিদের আমরা সকল প্রকার সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছি। ইতিমধ্যে পঞ্চগড়ে যেন একটি অকশন বাজার স্থাপন করা হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর