বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিদেশে যেতে না পারাই শাপে বর নরেনের

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৪ জুন, ২০২১ ১৬:৪৯

ছয় বছর পর নরেন একজন সফল উদ্যোক্তা। পরিশোধ হয়েছে তার সব ধারদেনা। যে টাকা বিদেশে আয় করার আশায় ছিলেন, মাস শেষে পকেটে ঢোকে তার চেয়ে বেশি।

ইয়েমেন যাবেন কাজের খোঁজে। ধারদেনা করে জমা দিলেন টাকা। কিন্তু দেশটিতে গৃহযুদ্ধ তাকে ফেলল নতুন অনিশ্চয়তায়।

ঋণের জালে জড়িয়ে নরেন হালদার এবার পাল্টে ফেললেন তার পরিকল্পনা। ভাবলেন বিদেশে নয়, ভাগ্য ফেরাবেন নিজের দেশেই।

ছয় বছর পর নরেন একজন সফল উদ্যোক্তা। পরিশোধ হয়েছে তার সব ধারদেনা। যে টাকা বিদেশে আয় করার আশায় ছিলেন, মাস শেষে পকেটে ঢোকে তার চেয়ে বেশি।

গল্পটার শুরু এ রকম

তিনি একজন আসবাব কারিগর। বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুরের দরিয়াবাদ গ্রামে। ভাবলেন দেশের চেয়ে বিদেশে গেলে আয় বেশি হবে। সেভাবেই সাজালেন পরিকল্পনা।

জানতে পারলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনে ভালো চাকরি আছে তার জন্য। বেতন-ভাতাও আকর্ষণীয়। কয়েক বছর কাজ করলেই নিজের আর স্বজনদের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল।

সেখানে লোক পাঠায় এমন এক রিক্রুটিং এজেন্সির খোঁজ পান নরেন। তারা যে টাকা চাইল, তা দেয়ার সংগতি ছিল না তখন।

এরপর স্বজন, পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধার নেন তিনি। বলেন, মাসে মাসে পরিশোধ করবেন। বিদেশে চাকরি পাবেন জেনে ঋণ দিতেও আপত্তি করেননি তারা।

কিন্তু তত দিনে ইয়েমেনে যুদ্ধের ঘনঘটা। সৌদি বিমানবাহিনীর বোমায় জীবন দুর্বিষহ। নরেনের যাওয়া আটকে গেল। তার চেয়ে বড় কথা, তার এই পরিস্থিতি জেনে পাওনাদাররা দিচ্ছেন টাকার চাপ। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সিতে জমা দেয়া টাকা থেকে কানাকড়িও ফেরত পাননি তিনি।

ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে থাকেন অনেকটা ফেরারি আসামির মতো।

ভাগ্য ফেরার গল্প

নরেনের স্ত্রী শ্যামলী জানান, পার্শবর্তী গ্রামের এক মাছচাষির পরামর্শে একটি পরিত্যক্ত ঘের লিজ নিয়ে শুরু করেন কই ও তেলাপিয়া মাছের চাষ। সেই থেকে শুরু। এরপর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের।

মাছ চাষে সফলতার কারণে নরেন হালদার পেয়েছেন সরকারি স্বীকৃতিও।

দেশেই তারা বিদেশে উপার্জনের চেয়ে বেশি টাকা আয় করছেন। সেই আয়ে ধীরে ধীরে দেনা শোধের পাশাপাশি পরিবারে ফিরে এসেছে আর্থিক সচ্ছলতাও।

স্ত্রীর সহযোগিতা আর কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নরেন এখন নাজিরপুরে একজন আদর্শ ও সফল মাছচাষি।

স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে লিজ নেয়া ৭০ শতাংশ জমিতে বর্তমানে দুটি ঘের রয়েছে তাদের। এখান থেকে প্রতি তিন মাস পরপর মাছ বিক্রি করেন। আর এ থেকে প্রতিবারই দুই লাখের বেশি টাকা লাভ করেন।

এ ছাড়া ঘেরের পাড়ে সবজি উৎপাদন করেও উপার্জন হয় তার। লাভের এই অর্থ দিয়েই তিন মেয়ের লেখাপড়া চালানোর পাশাপাশি সুন্দরভাবে ভরণপোষণ করছেন পরিবারের। আর পরিশোধ করেছেন পেছনের সব দেনা।

বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকারি ক্রেতারা নরেনের ঘের থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। আর নরেনের দেখাদেখি দরিয়াবাদ গ্রামে অনেকেই ঝুঁকছেন মাছ চাষের প্রতি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তপন কুমার ব্যাপারী জানান, নরেন হালদার আদর্শ একজন মাছচাষি। তার মাছ চাষে লাভবান হতে উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে দেয়া হচ্ছে নানা পরামর্শ।

তবে নরেন হালদারের দাবি, মাছের খাবারের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা কিছুটা সমস্যায় পড়ছেন। অন্যদিকে সরকার মাছচাষিদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে মাছ চাষ দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাবে।

এ বিভাগের আরো খবর