বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিচি ছাড়া লেবু

  •    
  • ৩ জুন, ২০২১ ১৭:০১

এই লেবুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বারো মাসই ফলন দেয়। এটি সুগন্ধিযুক্ত এবং বীজবিহীন। অন্যান্য লেবুর তুলনায় এ জাতের লেবুতে রস ও ভিটামিন-সির পরিমাণ বেশি। প্রতিটি গাছে প্রতি মৌসুমে ২৫০ থেকে ৩০০ লেবু হয়।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা বীজবিহীন বারোমাসি বিনালেবু-১ চাষে সফলতা পেয়েছেন। ময়মনসিংহসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এ লেবুর বাম্পার ফলনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। সারা দেশে চাষি পর্যায়ে এই লেবুর জাত ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

বিনা সূত্রে জানা যায়, উন্নত মানের এই লেবুর জাতটি উদ্ভাবন করেছেন বিনার বিজ্ঞানী ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম। ভিয়েতনামের একটি স্থানীয় জাত থেকে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে দীর্ঘ সময় গবেষণার পর মেলে সফলতা। আশানুরূপ ফলন হওয়ায় সফল হচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা এবং চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।

আরও জানা যায়, এই লেবুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বারো মাসই ফলন দেয়। এটি সুগন্ধিযুক্ত এবং বীজবিহীন। অন্যান্য লেবুর তুলনায় এ জাতের লেবুতে রস ও ভিটামিন-সির পরিমাণ বেশি। প্রতিটি গাছে প্রতি মৌসুমে ২৫০ থেকে ৩০০ লেবু হয়। চারা রোপণের ১০ থেকে ১১ মাস বয়সে লেবু পাওয়া যায়। একটি গাছ ১৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত লেবু দিয়ে থাকে।

সরেজমিনে ময়মনসিংহের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা গৌরীপুর উপজেলার কাশিয়ারচর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিনার তত্ত্বাবধানে পাঁচ একর জমি লিজ নিয়ে এ লেবু চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ লেবুবাগানের পাশেই নারী উদ্যোক্তা জেসমিন আরা কাজল সাত একর জায়গা লিজ নিয়ে একটি নার্সারি গড়ে তুলেছেন। সেখানে ৫০ হাজার বিনালেবু-১ জাতের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। এখানে কাজ করছেন বেকার যুবকসহ অনেক নারী। সেখান থেকে চারাগুলো স্বল্পমূল্যে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

নার্সারিতে কাজ করার সময় কথা হয় রবিন ও ফয়সাল নামে দুজন যুবক শ্রমিকের সঙ্গে। তারা জানান, অভাব-অনটনের কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি। একটু বড় হতেই পরিবারের হাল ধরতে বিভিন্ন কষ্টের কাজ করেছেন তারা। বাড়ির কাছে নার্সারি গড়ে ওঠায় সেখানে কাজের সুযোগ পেয়েছেন। ফলে প্রতি মাসের বেতন দিয়ে সংসারের ভরণপোষণ করছেন এই দুজনসহ কমপক্ষে আরও ১২-১৩ জন যুবক।

এ ছাড়া বাগানের লেবু তোলা, গাছের গোড়ায় পানি দেয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন আরও ১৫-১৬ জন নারী শ্রমিক।

হেলেনা, নাসিমা, নাজমা ও অজুফা নামের কয়েকজন জানান, তাদের বাড়ি উপজেলার কাশিয়ারচর এলাকায়। আগে নিজের বাড়িতে গৃহিণীর কাজ করেই সময় কাটিয়েছেন। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাসহ অর্থের জোগান দিতে এখানে কাজ করছেন। এ ছাড়া এই জাতের লেবুর বাগান সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মতো কর্মহীন বহু নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তারা।

এ সময় কথা হয় আধুনিক নার্সারি ও হর্টিকালচার ফার্মের পরিচালক ও নারী উদ্যোক্তা জেসমিন আরা কাজলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ জাতের লেবুর ৫০ হাজার চারা উৎপাদন করেছি। লেবুর গাছগুলো থেকে প্রতিদিন প্রচুর লেবু তুলে বাজারে বিক্রি করছি। এতে করে আমি লাভবান হয়েছি। এ জন্য বর্তমানে বিনালেবুর পাশাপাশি সব ধরনের চারা উৎপাদন করছি। তবে এই জাতের লেবুর চারা স্বল্পমূল্যে ও অনেককে বিনামূল্যে দিচ্ছি।

‘এ জাতের লেবু চাষে আগ্রহী করতে আমাদের উৎপাদিত চারাগুলো বিভিন্ন ফলদ মেলায় প্রদর্শন করে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছি। লেবুর চারা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চেষ্টা করছি। কারণ লেবুর বাগান যত বেশি হবে, ততই বেকার যুবকসহ দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

চারা উৎপাদন সম্পর্কে তিনি বলেন, কাটিং, গুটিকলম ও জোড়কলমের মাধ্যমে বিনালেবু-১-এর বংশবিস্তার করা হচ্ছে। কলম করার উপযুক্ত সময় এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত। তবে অ্যাগ্রোশেড দ্বারা তৈরি করা পলি হাউসে কলম করলে মৌসুমেও সফলভাবে কলম করা যায়। অযৌন পদ্ধতিসমূহের মধ্যে গুটিকলমের মধ্যমে তৈরি করা চারা দ্রুত ফল দেয়। তবে লেবুর চারা এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত লাগালে সফলতা সম্ভব।

বিনালেবু-১ জাতের উদ্ভাবক বিনার বিজ্ঞানী ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেবু বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি টকজাতীয় ফল। ভিয়েতনামের একটি স্থানীয় জাত (Landrace) হতে বিনালেবু-১-এর জার্মপ্লাজমটি সংগ্রহ করি। সংগৃহীত জার্মপ্লাজমটি বিনার প্রধান কার্যালয়সহ উপকেন্দ্রসমূহে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে LVG-1 নামক কৌলিক সারিটি শনাক্ত করা হয়।

‘পরবর্তী সময়ে এই সারিটি লেবু চাষ উপযোগী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফলন সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৮ সালে সারিটিকে বিনালেবু-১ নামে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য নিবন্ধন করা হয়।’

তিনি বলেন, প্রচলিত জাতের তুলনায় বিনালেবু-১-এর ফলন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। এ লেবু চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। অন্যদিকে লেবু চাষের জন্য পতিত জমি লিজ দিয়ে উপকৃত হচ্ছেন জমির মালিকরাও।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, উদ্ভাবিত এ লেবু চাষের মাধ্যমে এক বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করেই বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব। আর তাই সারা দেশে চাষিদের মাঝে এই লেবুর জাত ছড়িয়ে দিতে উদ্যোক্তাও তৈরি করছি এবং ইতিমধ্যে এই লেবু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর