বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

হাওরে নতুন পানিতে মাছ ধরার ধুম

  •    
  • ২৯ মে, ২০২১ ১০:০৮

কেউ মাছ ধরছে জীবিকার তাগিদে, কেউ বা শখের বশে। প্রতিদিনই তাদের জালে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। ঝাঁকি জাল, টানা জাল আর ঠেলা জাল দিয়ে এসব মাছ ধরা হচ্ছে। কেউ আবার পাঁটিবাঁধ ও চাঁইয়ের (মাছ ধরার ফাঁদ) সাহায্যে ধরছেন এসব মাছ।

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার খালবিল ও কৃষিজমিগুলোতে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে নতুন পানি। আর ওই পানিতে আয়োজন করে মাছ ধরছেন জেলেরা। বিরামহীনভাবে মাছ ধরতে হাওরের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন তারা।

বিভিন্ন উপজেলা থেকেও অনেকে হাওরে আসেন মাছ ধরতে। শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধদের সবাই মাছ ধরতে ব্যস্ত।

কেউ মাছ ধরছেন জীবিকার তাগিদে, কেউ বা শখের বশে। প্রতিদিনই তাদের জালে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। ঝাঁকি জাল, টানা জাল আর ঠেলা জাল দিয়ে এসব মাছ ধরা হচ্ছে। কেউ আবার পাঁটিবাঁধ ও চাঁইয়ের (মাছ ধরার ফাঁদ) সাহায্যে ধরছেন মাছ।

ট্যাংরা, চান্দা, তারা চিকরা, পুঁটি, চিংড়ি, বাতাসী মাছই বেশি ধরা পড়ছে জালে এবং পাঁটিবাঁধের চাঁইগুলোতে।

অনেকে দিনের বেলায়, আবার রাতের আঁধারে এককাঁটা, তেকাঁটা ও কোঁচ দিয়েও বড় মাছ শিকার করছেন। এ সময় মূলত ধরা পড়ে বোয়াল, রুই, শোল, গজার ইত্যাদি।

বর্ষার আগেই নতুন পানির আগমন যেন আনন্দ নিয়ে এসেছে এসব জেলের চোখমুখে।

হাওরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিজেদের খাওয়াদাওয়ার চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বেশ ভালোভাবে চলছে জেলেদের পরিবার।

করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের রৌহা এলাকা থেকে ঝাঁকি জাল নিয়ে হাওরে মাছ ধরতে এসেছেন পেশাদার জেলে ধনু মিয়া।

তিনি জানান, প্রতিবছরই দুই মৌসুমে মাছ ধরতে হাওরে আসেন তিনি ও তার সহযোগীরা। প্রথমে আসেন জ্যৈষ্ঠ মাসে যখন হাওরে নতুন পানি আসতে থাকে। পরেরবার আসেন কার্তিক মাসে যখন পানি নামতে শুরু করে। বছরের এই দুটি সময়েই সবচেয়ে বেশি মাছ ধরা পড়ে তাদের জালে।

ধনু মিয়া বলেন, ‘মেঘের সময় (বৃষ্টিতে) বেশি মাছ ধরা পড়ে। ঠাডা পড়লে (বজ্রপাতে) মাছ সড়কের দারে আইয়া পড়ে। তহন জালডা ফালাইলেই আর মিস নাই। বালা কইরে কয়েকটা খেউ দিতে পারলেই অয়।’

হাওরে মাছ ধরতে এসে বৃষ্টি-বজ্রপাতের মধ্যে মাছ ধরতে ভয় পান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মরণের ভয় করলে কি আর মাছ মারন যাইব? মাছ মারার শখ থাকলে মরণের চিন্তা করলে অইত না।’

মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘি হাওরে মাছ ধরার জন্য একটি খালের প্রবেশমুখে পাঁটিবাঁধ দিয়েছেন দ্বীন ইসলাম ও তার পাঁচ সহযোগী। পাঁটিবাঁধ দিয়ে ১২টি চাঁই পেতেছেন তিনি।

দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন ভালো পরিমাণেই মাছ আটকা পড়তাছে ফাঁদে। আল্লাহর রহমতে গত বছরের চাইতে এইবার বেশি মাছ ফাইতাছি। তয় বৃষ্টি আইলে মাছ বেশি লাগে (আটকা পড়ে)।’

শখের বসে বাবার সঙ্গে হাওরে মাছ ধরতে এসেছে গোপদিঘি গ্রামের স্কুলছাত্র উবাইদুল্লাহ তারেক।

তারেক জানায়, টানা জাল দিয়ে মাছ ধরে তারা। প্রায় তিন কেজির মতো মাছ পেয়েছে। মাছ ধরতে এসে বেশ খুশি সে।

তারেক বলে, ‘আব্বা প্রতিদিন মাছ মারে। এই মাছে আমরার পরিবারের কাওয়া-দাওয়াও চলে, বেচতামও ফারি। আজকে আমিও আইছি আব্বার লগে।’

তারেকের বাবা গিয়াসউদ্দীন পেশায় জেলে। তিনি বলেন, ‘আমরা ছুডু থাকতে জ্যৈষ্ঠ মাসে ২০ মিনিট মাছ মারলে ফুজা (ঝাঁকা) দিয়া মাথাত কইরে নেয়ন লাগছে। আর অহন সারা দিন ঘুইরেও একটা বাজারের ব্যাগ ভরতাম ফারি না। আমরা ছুডু থাকতে যেই মাছ দেখছি হের ১০০ ভাগের এক ভাগও অহন নাই।’

গিয়াস বলেন, ‘মাছ কমনের কারণ অইতাছে ডিম ছাড়নের টাইমে মাইনষে মাছ মাইরালায়। আবার বিনজাল নামের একটা জাল আছে, যেইডা দিয়া স্রোতের মাইঝে নদীতে ফাতে (জাল বিছানো)। এর লাইগ্যাও মাছ কইম্মা যাইতাছে।

‘এই জালডা কারেন (কারেন্ট) জালের থাইক্যেও বয়ংকর। একবার যেই মাছটা ডুহে এইডে আর বারোই তো ফারে না। ফাতার তিন দিন ফরে তুলে এই জাল। বড় মাছের আশায় ফাতলেও ছুডু মাছটি যে ডুহে এইডি শেষ। একবার ডুকলে জালের ভিতরেই পইচ্চা শেষ হয়।’

হাওরে গিয়ে দেখা যায়, খালবিলের পাশাপাশি কৃষিজমি থেকেও উঠে আসছে বিভিন্ন জাতের ছোট ছোট মাছ ও সেগুলোর পোনা। কিছুদিন পরই এই পোনা মাছগুলো বড় হবে। কিন্তু এরই মধ্যে একশ্রেণির মাছশিকারি বেড়জাল ও সুতি জাল দিয়ে অবাধে পোনা মাছ ধরছে। আবার সেগুলো প্রকাশ্যে বিক্রিও হচ্ছে গ্রামগঞ্জের বাজারগুলোতে।

তবে জেলেরা জানান, জীবিকা নির্বাহের বিকল্প কোনো উপায় না থাকায় এসব মাছ ধরতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

জেলা মৎস্য কর্মকতা রিপন কুমার পাল নিউজবাংলাকে জানান, বৃষ্টি হলে হাওরের মাছগুলো জমিতে উঠে বদ্ধ পানিতে ডিম ছাড়ে। আর এই মুহূর্তে এইগুলো ধরে ফেলার কারণে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা উপজেলাগুলোতে মাইকিংসহ বিভিন্নভাবে প্রচারের মাধ্যমে জেলেদের এবং মাছের আড়তদারদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া বাজারে এখন পুকুরে চাষের মাছ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কিছুদিন যদি জেলেরা এই পোনাগুলো না ধরে তাহলে তাদেরই লাভ। কিন্তু বেশির ভাগ জেলেই গরিব হওয়ায় তারা একদিনও বসে থাকতে রাজি না।

‘সমুদ্রের জেলেদের যেভাবে বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় আনা হয়েছে, হাওরের জেলেদের ক্ষেত্রে তেমনটা না থাকায় তাদের প্রতি বেশি চাপ দেয়া যায় না। তারপরও আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি তাদের সচেতন করার।’

কারেন্ট জাল, বেড়জাল এবং বিনজাল ব্যবহারকারী জেলেদের আইনের আওতায় আনার জন্য উপজেলা কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর