এমনিতেই গেল বছরের চেয়ে এবার লিচুর ফলন কম। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন রোগ। পরিপক্ব হওয়ার আগেই গাছেই ফেটে যাচ্ছে লিচু। তাতে দুশ্চিন্তার শেষ নেই ‘লিচু রাজ্য’ দিনাজপুরের চাষিদের।
স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় লিচুর এই জেলার বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি, বেদানা, কাঁঠালি, হাড়িয়াসহ কয়েক জাতের লিচুর ফলন হয়। দিনাজপুর থেকে লিচু যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের প্রায় সবখানেই। বাগানের লিচু পরিপক্ব হওয়ার অবস্থায় চলে এসেছে।
দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টার থেকে জানা যায়, দিনাজপুর জেলায় লিচুবাগান রয়েছে ৬৬৬টি। বছর বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ করা হয়েছে। জেলায় প্রায় সাড়ে ৭ লাখ লিচুগাছ পরিচর্যা করছেন সাড়ে ৫ হাজার বাগানি।
দিনাজপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদন হয় সদর উপজেলার মাশিমপুর গ্রামে। এই গ্রামেই রসাল বেদানা, চায়না থ্রি ও হাড়িয়া জাতের লিচু দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।
মাশিমপুর গ্রামের লিচুচাষি রাসেল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর আমি ফলন ভালো পাইছি। এ বছর তার অর্ধেক ফলন এসেছে। তার ওপর বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। গাছে লিচু ফেটে যাচ্ছে, ঝরে পড়ছে মাটিতে। সামনে আরও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এখন বাজারে লিচুর দাম মোটামুটি ভালো, তাই দ্রুত অপরিপক্ব লিচুগুলো বিক্রি করে দিচ্ছি।’
একই গ্রামের লিচুচাষি আইয়ুব আলী জানান, এ বছর আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় গাছে বেশি লিচু আসেনি। বৃষ্টিপাত দেরিতে হওয়ায় লিচুর দানাও ছোট হয়েছে। তার ওপর প্রচণ্ড তাপ প্রবাহের ফলে গাছে লিচু ফেটে গেছে।
‘সার, কীটনাশক, শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার পর এবার লাভের মুখ দেখতে পারব না। লিচুর ফলন একটু বেশি ও দাম ভালো পেলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হতো।’
লিচুচাষি মিন্টু ইসলাম জানান, একেই তো ফলন কম, তার ওপর খারাপ আবহাওয়া। এ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর যে গাছে পাঁচ হাজার লিচু ধরেছে, এবার সে গাছে দেড় হাজারেরও কম লিচু ধরেছে। শিলাবৃষ্টিতে লিচুর গায়ে দাগ পড়ছে, ঝরে পড়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড দাবদাহে লিচুগুলো ফেটে যাচ্ছে।
‘সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। সরকার যদি আমাদের সঠিক সময়ে সার ও কীটনাশক বিনা মূল্যে সরবরাহ করত তাহলে আমরা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পেতাম।’
এদিকে দিনাজপুর শহরের বড় ময়দানে দেশের সবচেয়ে বড় লিচুর মার্কেটের ফল আড়তদার সুমন ইসলাম জানান, এ বছর তীব্র গরমের কারণে লিচু গাছে শুকিয়ে ও ফেটে যাচ্ছে। বাগানিরা অপরিপক্ব লিচু গাছ থেকে বাধ্য হয়ে ভেঙে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ বছর লিচুর দাম একটু বেশি রয়েছে। তবে জেলার পরিপক্ব ও সুস্বাদু লিচু বাজারে উঠবে সপ্তাহ খানেক পরে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর দিনাজপুর জেলায় লিচুর ফলন কম হয়েছে। তীব্র গরমের কারণে লিচু ফেটে যাচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে লিচুচাষিরা অনেকটা কাঁচা অবস্থায় তাদের লিচুগুলো বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
‘অপরিপক্ব লিচু যেমন মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি পরিপক্ব লিচুর যে স্বাদ তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। অপরিপক্ব এসব লিচু বাজারজাত না করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে লিচুচাষি ও বিক্রেতাদের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।’