মৌসুমের শুরুতে ভালো ফলনের আভাস ছিল। কিন্তু টানা অনাবৃষ্টি আর কয়েক দিনের গরমে সিরাজগঞ্জ আর পাবনায় লিচু ফেটে ঝরে পড়ছে মাটিতে। কৃষকেরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের নওখাদা গ্রামের বাগানমালিক লিয়াকত আলী মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অনেক আশা নিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে মোজাফফর, চিনি চম্পা, চায়না থ্রিসহ বেশ কয়েক জাতের লিচুর চাষ করেছি। প্রথমে গাছে ভালো ফুল এলেও এখন আমি হতাশ।’
আরেক বাগানমালিক আয়শা খাতুন বলেন, ‘পারিবারিক ৩৩ বিঘা জমিতে আমরা পরিবারের সবাই ভাগাভাগি করে লিচু চাষ করি। আমাদের দেখে এখন এলাকার অনেকেই লিচু বাগান করছে।
‘ভেবেছিলাম বাগান থেকে লিচুর ভালো ফল পাব। কিন্তু রোদে পুড়ে লিচু ফেটে যাচ্ছে। লিচুর রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই লোকসান কীভাবে পোষাব জানি না।’
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার লুনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশে এখন বিভিন্ন রকমের ফসলের পাশাপাশি লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। চলতি বছর লিচুর পরাগায়নের সময় তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ফলন কম হতে পারে। আমরা বাগানমালিকদের সব সময় ফল রক্ষায় বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
পাবনা থেকে প্রতিনিধি জানান, এ বছর পাবনার চাটমোহর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়া, সুজানগর উপজেলায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ঈশ্বরদীতে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৪১ হাজার টন। তবে প্রচণ্ড খরার কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলন বিপর্যয় হয়েছে বলে স্বীকার করলেও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ।
লিচু ব্যবসায়ীরা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীসহ বিভিন্ন এলাকায় গাছ থেকে লিচু পাড়া শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আঁটি লিচুগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে। আরও সপ্তাহখানেক এই লিচু পাড়া হবে। এরপর জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে আসবে বম্বে লিচু।
লিচু ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান শামিম জানান, প্রথম থেকেই এবার বাগান থেকে প্রতি ১০০ লিচু প্রায় ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার এ রকম চড়া থাকলে বম্বে লিচু বাজারজাত করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন লিচুচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও জানান, এখনও ২৫ শতাংশ লিচু পাড়া হয়নি। প্রতিদিন ঈশ্বরদী থেকে ২০ থেকে ৩০ ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। তবে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় এক থেকে দুই সপ্তাহের বেশি লিচুর ফলন পাওয়া যাবে না বলে জানান তিনি।
লিচু চাষের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গাছ থেকে লিচু পাড়া, বাছাই, প্যাকেট করা ও ট্রাকে লিচু লোড করাসহ পুরো এলাকায় এখন লিচু নিয়ে ব্যস্ততা চলছে। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহ এ ব্যস্ততা থাকবে বলে জানান বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা।
লিচুচাষি আব্দুস সালাম জানান, তিনি এ বছর তিনটি বাগানে লিচুর আবাদ করছেন। প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে তিনটি লিচুবাগান কিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রির টার্গেট থাকলেও ফলন বিপর্যয়ের কারণে এখন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
তার তিনটি বাগানে দেড় শতাধিক লিচুগাছ। বেশির ভাগই হাইব্রিড বম্বে জাতের লিচু। এ ছাড়া রয়েছে দেশি প্রজাতির আঁটি লিচুর গাছ। একটি বড় গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার লিচু পাওয়া গেলেও এ বছর বড় গাছ থেকে ১০ হাজারের বেশি লিচু পাচ্ছেন না তিনি।
খরার কারণে প্রায় ৫০ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষকরা দাবি করলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল কাদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লিচুর ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন।