বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাষ হবে বাতাসিও

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৪ মে, ২০২১ ১৭:৩৫

বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শাহা আলী নিউজবাংলাকে জানান, দুই বছর গবেষণা করে ১৯ মে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাতাসি মাছের রেণু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন। তবে প্রচুর রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে চাষের আওতায় আনতে আরও এক বছর লাগবে।

ঢেলা মাছের পোনা উৎপাদনে সাফল্যের পর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা এবার কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় বাতাসি মাছের রেণু পোনা উৎপাদনেও সফল হয়েছেন।

বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে ইনস্টিটিউটের প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রে এ নিয়ে গবেষণা হয়। এর আগে আরও ২৫ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের প্রজনন ও চাষকৌশল উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানীরা।

বিএফআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহা আলী নিউজবাংলাকে জানান, দুই বছর গবেষণা করে ১৯ মে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাতাসি মাছের রেণু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন।

তবে প্রচুর রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে চাষের আওতায় আনতে আরও এক বছর লাগবে। এর পরই বাজারে পাওয়া যাবে বিলুপ্তপ্রায় বাতাসি মাছ।

ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, গবেষণার আওতায় চলতি মে মাসে বাতাসি মাছকে হরমোন ইনজেকশন দেয়া হয়। হরমোন প্রয়োগের ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা পর বাতাসি মাছ ডিম ছাড়ে এবং ২৩ থেকে ২৫ ঘণ্টা পর নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পোনা বের হয়।

ডিম নিষিক্তের হার ছিল শতকরা প্রায় ৭৩ ভাগ। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বাতাসি মাছের রেণু বর্তমানে প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের হ্যাচারিতে উৎপাদন হচ্ছে।

গবেষক দলে ছিলেন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রিন্টু দাস, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ও মালিহা খানম।

বিএফআরআই সূত্রে জানা যায়, বাতাসি মাছের বৈজ্ঞানিক নাম Notropis Atherinoides.

এটি দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর দেহ চ্যাপ্টা ও ওপরের চোয়াল নিচের চোয়ালের চেয়ে কিছুটা লম্বা। প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী বাতাসি মাছে পটাশিয়াম ৬১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪০০ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ২০০ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ১৪.৪ মিলিগ্রাম, আয়রন ৩৩ মিলিগ্রাম এবং ম্যাঙ্গানিজ ২০০ মিলিগ্রাম রয়েছে। যা অন্যান্য দেশি ছোট মাছের তুলনায় অনেক বেশি। জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও মিয়ানমারে পাওয়া যায়। বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায় পিয়ালী, কাজলি, কাকিলা, রানি ও গাঙ টেংরাসহ আরও আটটি মাছ নিয়ে গবেষণা চলছে।

গবেষক দলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ডেভিড রিন্টু দাস জানান, যমুনা ও আত্রাই নদীসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বাতাসি মাছের পোনা সংগ্রহ করে বগুড়ার সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্রের পুকুরে নিবিড়ভাবে প্রতিপালন হয়।

এ সময় বাতাসি মাছের খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। একটি পরিপক্ব বাতাসি মাছের খাদ্যনালিতে শতকরা ৮৬ ভাগ প্লাংটন ও ১৪ ভাগ অন্যান্য খাদ্যবস্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা হয়।

এ ছাড়া বছরব্যাপী জিএসআই ও হিস্টোলজি পরীক্ষণের মাধ্যমে বাতাসি মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয় মে থেকে জুলাই মাস। এর ডিম ধারণক্ষমতা আকারভেদে ১২০০-২৫০০টি। একটি পরিপক্ব স্ত্রী বাতাসি মাছ ৪ থেকে ৬ গ্রাম ওজনের হলেই প্রজনন উপযোগী হয়।

তিনি আরও জানান, পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা কারণে বাতাসি মাছ জলাশয়ে এখন আর তেমন পাওয়া যায় না। ক্রমান্বয়ে মাছটি বিপন্নের তালিকায় চলে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিলুপ্তপ্রায় বাতাসি মাছ পুনরুদ্ধারে গবেষণার মাধ্যমে প্রজনন-কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে মাছটি চাষ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

এ বিষয়ে বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, দেশীয় মাছ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিএফআরআই ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে ২০২০ সালে একটি ‘লাইভ জিন ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বিলুপ্তপ্রায় মাছ পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়। পর্যায়ক্রমে সব বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদন-কৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে চাষিরা আবার এসব মাছ চাষ করবেন।

ঢেলা মাছের পোনা উৎপাদন

এদিকে টানা দুই বছরের গবেষণায় কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ঢেলা মাছের পোনা উৎপাদনেও সফল হয়েছেন বিএফআরআই স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

গবেষক দলে ছিলেন বিএফআরআইয়ের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কোহিনুর, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহা আলী, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াসমিন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল আওয়াল।

ইনস্টিটিউট থেকে জানানো হয়, ঢেলা মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম হচ্ছে মে থেকে জুন। তবে প্রজননকাল শুরু হয় এপ্রিলের শেষ দিকে। এ মাছের ডিম ধারণক্ষমতা প্রতি গ্রামে ৭০০-৮০০টি।

গবেষকরা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ১০ জোড়া ঢেলা মাছে হরমোন প্রয়োগ করেন। হরমোন দেয়ার ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পর মাছগুলো ডিম ছাড়ে। ডিম নিষিক্তের পরিমাণ ছিল প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ। ২২ ঘণ্টা পর সেই ডিম থেকে রেণু উৎপাদিত হয়।

বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের আওতায় আনার বিষয়ে ড. শাহা বলেন, ‘চাষাবাদের আওতায় আনতে প্রচুর পোনা প্রয়োজন। তাই আমরা পোনা উৎপাদনসহ আরও দুই বছর গবেষণা করব। যাতে বাণিজ্যিকভাবে এ মাছ চাষিরা সফলতা লাভ করেন।’

আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢেলা মাছকে সম্পূর্ণভাবে চাষযোগ্য করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দেশীয় মাছ সংরক্ষণ এবং পোনা উৎপাদনে গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২০ সালে একুশে পদক লাভ করে।

এ বিভাগের আরো খবর