বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অভিযানেই মাছধরার সুময় শ্যাষ, কিস্তি দিমু কেমনে?’

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২০ মে, ২০২১ ০৮:৫৫

মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাগরে ৬৫ দিনের জন্য মাছ শিকার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা বুধবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়ে চলবে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত। এই প্রেক্ষাপটে বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ভোলার ৬৩ হাজার জেলে।

‘নদীতে দুই মাসের অভিযানে মাছ ধরি নাই। এখন নদীতে যাই, মাছ পাই না। খরচাও ওডে না। সাগরে যামু। তাও দিছে দুই মাসের অভিযান। এই অভিযানে অভিযানেই আমাগো মাছ ধরার সুময় শ্যাষ। মাছ আর পাই না। এখন কিস্তির টাকা দিমু কেমনে আর বৌ-পোলাইন লইয়া চলমুই বা কেমনে।’

সাগরে মাছধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথা জানাচ্ছিলেন জেলে সহিজন মাঝি।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সাহায্য হিসেবে যে চাল দেয় তা সব উপরের (যারা প্রকৃত জেলে না) মানুষেরা পায়। আমরা কিছুই পাই না।’

নিষেধাজ্ঞার শুরুর দিকে যথাযথ সহায়তা না পেলে বাধ্য হয়ে মাছ ধরতে হবে বলে জানান তিনি।

মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাগরে ৬৫ দিনের জন্য মাছ শিকার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা বুধবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়ে চলবে আগামী ৩০ জুলাই পর্যন্ত।

বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন ভোলার ৬৩ হাজার জেলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে দিন কাটবে সে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা তারা। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানালেন, নিবন্ধিত ৬৩ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।

মার্চ-এপ্রিল দুই মাস বিভিন্ন নদীর অভয়াশ্রমে ইলিশসহ অন্য মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ পর ফের সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় হতাশ ভোলার সমুদ্রগামী জেলেরা।

তাদের মতে, মৌসুম না আসায় মে-জুনে নদীতে এমনিতেই ইলিশ থাকে না। এ সময় সমুদ্র এলাকায় কিছু ইলিশ পাওয়া যায়। কিন্তু নদীতে দুই মাস মাছ শিকার করতে না পারায় যে ক্ষতির কবলে পড়েছেন জেলেরা, তার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগমুহূর্তে সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার এমন নির্দেশকে তারা বিনা মেঘে বর্জপাতের মতো ঘটনা বলে মনে করছেন।সাগরে মাছধরা বন্ধ, তাই ভোলার উপকূলীয় এলাকার সমুদ্রে থাকা জেলেরা জাল, ট্রলার ও ফিশিংবোট নিয়ে নিজ নিজ ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন।

ভোলার দৌলতখানের সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া রফিক মাঝি বলেন, এমন নিষেধাজ্ঞা থাকলে নৌকা, জাল, জ্বালানি ও শ্রমজীবি জেলেদের ব্যয় নির্বাহ করে এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। সাগরে মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার অথবা সময় কমিয়ে এক মাসে নামিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

দৌলতখানের মাছ ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘করোনায় গত বছর ২৭ লাখ টাকা লোকসান দিছি। মাছ কিনে পার্টির কাছে কম দামে বেচতে হইছে। আশা ছিল, এ বছর লোকসান পুষায় লাভ আসবে। তা আর হলো না। কিন্তু এই সময় বাংলাদেশের জলসীমায় নির্বিচারে মাছ ধরছে ভারতীয় জেলেরা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে ‘

জাকির হোসেন মাছ ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দেয়ার দাবি জানান।

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজাহারুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছর এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হওয়ায় গেল বছর ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন কয়েক গুণ বেড়েছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য বিভাগ আরও গুরুত্ব দিচ্ছে।

এ সময় মাছ শিকার থেকে বিরত থাকা জেলেরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে, সে জন্য ভোলার ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন সমুদ্রগামী জেলের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সময় এলে প্রণোদনার চাল বিতরণেরও উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়াও সাগরে ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সম্মিলিত পদক্ষেপ থাকবে।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ শিকারে গেলে জেলেদের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ভোলার ৭ উপজেলায় ১৬৪ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ৩৩০ জন জেলেকে প্রায় ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর