পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় বোরোক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে ।
বিশেষ করে সদর, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় এই রোগের সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এক ক্ষেত থেকে অন্য ক্ষেতে।
কৃষকদের অভিযোগ, এই ধানের বীজ তারা কৃষি অধিদপ্তর থেকেই নিয়েছেন। তবে এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে দফায় দফায় কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ হচ্ছে না।
নিশ্চিত লোকসানের আশঙ্কায় দিশেহারা বোরো চাষিরা।
তবে কৃষি বিভাগের দাবি, কেবল ২৮ এবং ৬১ জাতের ধানেই এই ছত্রাক দেখা দিয়েছে। বীজবাহিত এ রোগ দেখা দেয়ার কারণ স্থানীয় গুমোট আবহাওয়া। এই দুই জাতের বীজ পঞ্চগড়ের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না।
সংক্রমণ সামান্য এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে এই দুই জাতের ধান চাষেও কৃষকদের নিরুৎসাহিত করছেন তারা।
ধানের গলা পচে পড়ে যাচ্ছে চিটা ধরা ধানের শিষ। ছবি: নিউজবাংলা
চলতি মৌসুমে পঞ্চগড়ে দুই লাখ চার হাজার ৩২০ মেট্রিক টন বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৩০ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে।
তবে বিভিন্ন ক্ষেতে ব্লাস্ট (ধানের গলা পচা রোগ) রোগের আক্রমণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের কৃষক ইসলাম উদ্দীন জানান, নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধানের শিষগুলো আস্তে আস্তে সাদা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। শিষের গোড়ায় প্রথমে এই রোগ দেখা দিচ্ছে। পরে আস্তে আস্তে পুরো শিষকে গ্রাস করছে। শিষের ধানগুলো চিটা হয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুয়ায়ী কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বোরো চাষি অমর আলী জানান, জমি বর্গা নিয়ে ঋণের টাকায় সার, বীজ কিনেছেন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছেন। ধানের চিটা লাগতে দেখে এখন বর্গার ধান কীভাবে দেবেন ওই চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
বোদা চন্দনবাড়ি এলাকার কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, এটি একটি বীজবাহিত রোগ। নানা রকমের কীটনাশক দিয়েও ধানগাছকে ব্লাস্ট থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না।
তাদের দাবি, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সরকারি বীজ কিনে ক্ষেতের এই অবস্থা। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে (বিএস) ফোন করেও তাদের কোনো সহায়তা পাননি তারা।
তবে কৃষকদের এ অভিযোগ মানতে রাজি নন পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে চাষিদের প্রয়োজনী পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ধানের নির্দিষ্ট দুই জাতে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় আবহাওয়ার এবং বীজের জাতের কারণে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। গুমোট আবহাওয়া, রোদের অভাব, বেশি বৃষ্টিতে এই ছত্রাক বিস্তার লাভ করে।
তারা চান, এই দুই জাতের ধান কৃষকরা যেন আর চাষ না করেন। তারা নানাভাবে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছেন।