বাজারে উঠেছে রাজশাহীর রসাল গুটি আম। প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুসারে শনিবার শুরু হয়েছে আম পাড়া।
আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় নামবে গোপালভোগ আম। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য জাতের আম পাড়া হবে।
গাছের কাঁচাপাকা আম নিয়ে বিকেলের আগেই চাষিরা হাজির হন নগরীর শালবাগান, বাগাবাজার, পুঠিয়া ও চারঘাটের বাজারে। কিন্তু ক্রেতার সমাগম ছিল না তেমন। কয়েকজন চাষি বলেন, প্রথম দিন বলে বাজারে পাইকার কম। তবে দুই-এক দিনের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে বেচাবিক্রি।
রাজশাহীর আড়ানী এলাকার ব্যবসায়ী মাহতাব উদ্দিন বাদশা বলেন, এখনও আসলে আম সেভাবে পাকেনি। বৈশাখী জাতের কিছু গুটি আছে সেগুলো পাকছে কেবল। প্রথম দিন সেভাবে আম পাড়াও শুরু হয়নি। দুচারজন পেড়েছে আম। এসব গুটি আমের দাম সাত-আটশ টাকা থেকে শুরু করে হাজার বারোশ টাকা মণ।
বাঘা উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, এ অঞ্চলের আমচাষিরা এখন প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে। আগামী সপ্তাহ থেকে জমবে বাজার। এখন যেগুলো পাকছে সেগুলোর তেমন চাহিদা নেই, দামও কম।
শালবাগান এলাকার আম ব্যবসায়ী সিরাজুর ইসলাম বলেন, শালবাগানে মূলত গোপালভোগ আম দিয়ে মৌসুম শুরু হয়। গুটি আম দুএকজন আনলেও বাজার জমবে মূলত গোপালভোগ আম পাড়া শুরুর পর। ২০ তারিখের পর এসব আম বাজারে আসবে।
সিরাজুল ইসলাম জানান, এখানকার আম রাজশাহী শহর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাবে। এজন্য তারা প্রস্তুতি নিয়ে আছেন। বেশি চাহিদা থাকে গোপালভোগ, ল্যাংড়া এবং হিমসাগরের।
নগরীর সাহেব বাজার এলাকার আমের ক্রেতা মাহফুজুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরেই শহরে কিছু আম দেখা যাচ্ছিল। ভ্যানে ভ্যানে পাড়া মহল্লাতেও এসব আম আজ বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে আমের তেমন স্বাদ নেই। একটু টকটক লাগে। তবু বাচ্চাদের জন্য অল্প সামান্য কিনতে এসেছি। তিনি বলেন, আমের মান অনুযায়ী দাম একটু বেশিই নেয়া হচ্ছে। প্রতি কেজি আম ৬০/৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ মের আগে কোনো আম পাকলে জানাতে হবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। তখন প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা হবে।
জেলায় সাধারণত সবার আগে পাকে গুটি জাতের আম। উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা পাড়া যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে পাড়া যাবে।
ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ও ফজলি আম ১৫ জুন থেকে পাড়া যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে পাড়া যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গত কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীতে আম নামানোর তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এবারও সিদ্ধান্ত নিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষ থেকে অনলাইন প্লাটফর্মে জুম মিটিং করা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমগাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার টন।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন নিউজবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত গাছে যে পরিমাণ আম রয়েছে তাতে এবারে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশাবাদী। এবারে আমের স্বাদ ভালো বলে জানান তিনি।