বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খরায় ঝরছে আমের গুটি

  •    
  • ২৭ এপ্রিল, ২০২১ ০৮:১২

‘আমকে আপনারা ফল বললেও আমরা এটাকে ফসল বলি, কারণ এটার ওপরই আমাদের অর্থনৈতিক দিক অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু এবার আমের অবস্থা খুবই খারাপ। খরায় আম বড়ই হয়নি।’

তীব্র খরায় ঝরে পড়ছে আমের গুটি, বাড়ছে না আমের আকার। বাগানজুড়ে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এলেও ফলন নিয়ে চিন্তিত চাষিরা। তারা বলছেন, সেচ দিয়েও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। বাড়ছে উৎপাদন খরচ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সবশেষ ভালো বৃষ্টি হয়েছিল গত বছরের ৯ অক্টোবর। এরপর ২১ এপ্রিল সন্ধ্যার পর অল্প বৃষ্টি হয় তিন উপজেলায়। এর মধ্যে নাচোলে ১০ মিলিমিটার এবং গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।

এমন খরায় আমগাছের কী হাল, তা দেখতে যাওয়া হয় জেলার কয়েকটি আমবাগানে। আমগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষি ও শ্রমিকরা। বাগান পাহারা ও আম পেড়ে রাখার জন্য বাগানেই কুড়া (অস্থায়ী ঘর) তৈরির কাজ শুরু করেছেন অনেকে। অনেক বাগানে পাহারাদারও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সদরের রাজারামপুরের আমবাগানে কথা হয় পাহারাদার ও আমশ্রমিক আব্দুল জলিলের সঙ্গে। গত পনেরো দিন তিনি বাগানে থাকছেন। তার এখন কাজ আমগাছের কোনো ডাল হেলে পড়ল কি না, তা দেখে বাঁশ দিয়ে ঠেকা দেয়া।

জলিল বলেন, ‘এ বছর আমের অবস্থা খুবই খারাপ। গাছের গোড়ায় এত এত পানি দেয়ার পরও আম ঝরছে। এখন কী করব না করব কিছুই বুঝতে পারছি ন্যা। পানি-টানি নাই, এ জন্য আমে কচ ব্যাধেনি, আম বড় হতে পারেনি। বৈশাখে যে আম পাকতো তা একটু লেটে পাকবে এখন। আগাম যে মুকুল আইস্যাছিল, তার বেশির ভাগই পড়ে গেছে।’

জেলার সবচেয়ে বেশি আমবাগান শিবগঞ্জে। সেখানকার আম ব্যবসায়ীদের নিয়ে কাজ করা শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সেক্রেটারি ইসমাইল খান শামীম।

তিনি বলেন, প্রায় ৮ মাস থেকে শিবগঞ্জে বৃষ্টি নেই, দীর্ঘ খরায় আম ঝরে পড়েছে, সেটি ঠেকাতে নিয়মিত সেচ দিচ্ছেন বাগানিরা। এতে তাদের খরচ বাড়ছে।

ইসমাইল খান শামীম বলেন, সাধারণত দুই থেকে তিনবার বাগানে সেচ দিলেও এ বছর ছয় থেকে সাতবার সেচ দিতে হয়েছে। এখন সেচ দিলেও গাছে থাকা আমের বৃদ্ধি ঠিকমতো হয়নি। আমের আকার এবার কিছুটা ছোটই হবে। যার ফলে বাজারে ভালো দাম না পাওয়ার ভয় থেকেই যাচ্ছে।

হরিপুর মিয়াপাড়ার নাহিদুল ইসলাম মিয়া জানান, তার পারিবারিক বেশ কয়েকটি বাগান আছে। আম বিক্রি করে ভালোই আয় করেন। এ বছরও মুকুল আসার সময় বেশি দামে বাগান বিক্রি করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু খরায় আমের গুটি ঝরে যাওয়ায় ও আমের আকার এখনও ছোট থাকায় তিনি দাম নিয়ে শঙ্কিত।

নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমকে আপনারা ফল বললেও আমরা এটাকে ফসল বলি, কারণ এটার ওপরই আমাদের অর্থনৈতিক দিক অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু এবার আমের অবস্থা খুবই খারাপ। খরায় আম বড়ই হয়নি।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর অনেক মুকুল এসেছিল। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু আম ঝরে পড়েছে। কিছুটা হলেও এটি ফলন বিপর্যয়। বৃষ্টি হলে এই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এ বছর আমের গঠনের যে পরিবর্তন সেটি কিছুটা দেরিতে হচ্ছে। ফলে গুটি আম যেগুলো আগে বাজারে আসে, সেগুলো কয়েক দিন দেরিতে আসবে।

অনাবৃষ্টির কারণে ঝিনাইদহেও ঝরে যাচ্ছে আমের মুকুল। বাগানে পানি না থাকায় আমে দেখা দিয়েছে কালো দাগ। এতে এবারও লোকসানের আশঙ্কা করছেন বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ছয় উপজেলায় ২ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার টন। কিন্তু বাগানমালিকরা লোকসানের ভয় পাচ্ছেন।

সদর উপজেলার চণ্ডীপুর, কামতা মির্জাপুর ও কোটচাঁদপুরের বিভিন্ন গ্রামের আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে ঝুলছে আম্রপালি, ল্যাংড়া, খিরসা, হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগরসহ নানান জাতের আম। গুটি ঝরা ঠেকাতে বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিষেধক দিলেও কাজ হচ্ছে না।

সদরের চণ্ডীপুর গ্রামের আমবাগানি খয়ের উদ্দিন বলেন, ‘কয় মাস বৃষ্টি নেই। আমগাছের গোড়ায় পানি নেই। আমের গুটি ঝরে পড়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করিছিলাম এবার মনে হয় আম ভালো হবে। গুটিও ভালো হইছে কিন্তু ঝরে পড়ে যাচ্ছে। এভাবে পড়তে থাকলে গাছে তো আম থাকবে না।’

একই গ্রামের ব্যবসায়ী কাদের উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর দুই বিঘা আম বাগান কিনিছিলাম। গতবার তো আম্পানে সব আম পড়ে গেছে। এবারও দুই বিঘে জমির আমবাগান কিনিছি। এবারও বৃষ্টি না হাওয়ার কারণে সব শ্যাষ। আমরা তো এবার পতে (পথে) বসে যাব।’

কোটচাঁদপুরের আমবাগানি আজিজুর রহমান বলেন, ‘এবার আমে যে মুকুল আইছিল তাতে আমরা খুবই খুশি ছিলাম। মুকুলের পর গুটি আসাতে আমরা ভাবছিলাম এবার ফলন ভালো হলে কিছু লাভ করতি পারব। কিন্তু বিপদ তো পিছ ছাড়ছে না। গুটি ঝরে পড়ে যাচ্চে। গাছের গুড়ায় পানি দিচ্চি। কিন্তু সেচ পাম্পেও পানি ওটছে না। কোনদিক যাব আমরা। আমরা তো মরে শ্যাষ ইবার।’

আরেক বাগানমালিক হাসান মিয়া বলেন, ‘গতবার আম্পানের পর করোনার কারণে দাম পাইনি। আর এবার আম তো গাছেই থাকছে না। গাছে যদি আম নাই থাকে তাহলি বিক্রি করব কী?’

গুটি ঝরে পড়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ঝিনাইদহ সদরের কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিমও।

তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে আমের মুকুল ভালো ছিল। এখন পর্যন্ত আমে যে গুটি রয়েছে তা ধরে রাখতে পারলে বাগানমালিকরা ভালো ফলন পাবে। কিন্তু এখন আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় আমবাগানে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ঢালাও পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে। সেচ দেয়ার পর আমগাছের গোড়ায় মাঞ্চিং করে দিতে হবে। তাতে কিছুটা রস ধরে থাকলে গুটি পড়া রোধ হবে। একই সঙ্গে বোরন, দস্তা ও জিংক জাতীয় যে ওষুধ পাওয়া যায়, তা গাছে প্রয়োগ করলে সমস্যা কিছুটা সমাধান হবে।

এ বিভাগের আরো খবর