মাঠজুড়ে সারি সারি খেজুরগাছ। প্রতিটি প্রায় আট ফুট লম্বা। ছড়িয়ে থাকা পাতার কারণে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন ঝাউবন।
কাছে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি গাছেই থোকায় থোকায় ধরেছে খেজুর। কোনো গাছে ধরেছে মরিয়ম জাতের, কোনোটিতে আজু, কোনোটিতে কালাস জাতের খেজুর। সবগুলোই সৌদি আরবের। তবে খেজুরগুলো এখনও অপরিপক্ব।
সৌদি খেজুরের এই বাগান মাগুরা সদরের কুচিয়ামোরা ইউনিয়নের গাংনি গ্রামে। ভারত থেকে সৌদি খেজুরের চারা এনে এই বাগান করেছেন কাজী মহিদুল হক।
নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ইউটিউবে দেশের এক চাষির খেজুরের চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন। পরে পরিচিত এক ব্যক্তিকে দিয়ে চারা আনিয়ে বাড়ির পাশেই রোপণ করেন। ইউটিউব দেখে গাছগুলোর পরিচর্যা শেখেন তিনি।
মহিদুল বলেন, ‘সৌদির খেজুরের যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনই চারারও চাহিদা অনেক। আমার এখানে যে গাছগুলোতে খেজুর ধরেছে, সেগুলো খুব ভালো জাতের। মোট ৭৬টি চারা লাগিয়েছিলাম তিন বছর আগে। এরপর ইউটিউব ঘেঁটে এর পরির্চযা শুরু করি।
‘তিন জাতের খেজুর গাছের যত্ন একই রকম। প্রথম প্রথম ধৈর্যহারা হয়ে যেতাম। এক বছরের মাথায় খেজুরের মাঠে পানি জমেছিল। খেয়াল করলাম বেশি পানিতে গাছের ক্ষতি হয়। ডজনখানেক শ্রমিক লাগিয়ে গাছের চারপাশে মাটি উঁচু করে দিয়ে পানি ঢোকা রোধ করি। পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিন বছরে খুব পরিশ্রম। জেদ ছিল, গাছগুলোতে আমি সৌদির খেজুর ধরা দেখব।’
এক একর জমিজুড়ে তার খেজুরবাগান। প্রতিটি মা-গাছের গোড়ায় চার থেকে ছয়টি চারা গজিয়েছে। এগুলোকে কাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে লাগালে মা-গাছের মতোই ফল ধরবে।
বাগানের ৭৬টি গাছের মধ্যে ৬০টিতেই খেজুর ঝুলছে। মহিদুল জানান, এই খেজুরগুলো কাঁচা থাকতেই খুব মিষ্টি হয়।
বাগান ঘুরে দেখা যায়, খেজুরগুলো গোলাকার। এক একটি গোছায় ১০০ থেকে ২৫০টি খেজুর ধরেছে। মহিদুলের হিসাব অনুযায়ী, বাগানে যে পরিমাণ খেজুর এখন ধরেছে, নষ্ট না হলে এগুলোর বাজারমূল্য পাঁচ লাখ টাকার বেশি হবে।
তিনি জানান, এরই মধ্যে কয়েক লাখ টাকার চারাই তিনি বিক্রি করেছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন তার ক্রেতা।
মহিদুল বলেন, ‘আমি দৈনিক চুক্তি করা শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছি গাছগুলোর নিয়মিত পরিচর্যার জন্য। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা প্রথম দিকে এসেছিলেন। তারা পরামর্শ দিয়েছিলেন সঠিক পরিচর্যার জন্য।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, ‘সৌদি জাতের খেজুরগাছগুলো সাধারণত আমাদের দেশের মাটির উপযোগী হয় না। হলেও সফলতার হার কম। তবে মাগুরায় ওই সৌদি খেজুরের বিশাল বাগান করেছেন এক কৃষক, তা শুনেছি। আমি সেটি দেখতে যাব শিগগির। খেজুরগাছে ফল আসা মানে সফলতা বলা যায়।
‘আমাদের মাগুরার মাটি কিছুটা বেলে-দোআঁশ। এতে এঁটেল মাটির সংমিশ্রণ রয়েছে। তাই এখানে দেশি খেজুরগাছের আধিক্য দেখা যায়। সে কারণে হয়তো গাবতলা বাজারের ওই মাঠের মাটিও খেজুরগাছের উপযোগী হয়েছে। যে জন্য খেজুর ফলনে সমস্যা হয়নি।’
স্থানীয় বাসিন্দা ছানু শেখ বলেন, ‘বাগানটা একবার দেখছিলাম। এত বড় বাগান, তা-ও আবার খেজুরগাছের। খেজুর ধরিছে জানি। খুব যত্ন করতি দেখিছি।’
একই এলাকার নাসির মোল্লা বলেন, ‘সৌদির খেজুর ধরিছে গাছে, এটা আল্লাহর রহমত। যে খেজুর সৌদিতে ধরে, সেইটা আমার এলাকায় চাষ হচ্ছে, সে জন্য খুব ভালো লাগছে।’
খেজুরের বাগানের পাশেই ১০ একর জমিতে মহিদুল চাষ করেছেন ড্রাগন, মাল্টা ও পেয়ারা। সেগুলোরও বেশ চাহিদা আছে বলে জানালেন এই কৃষক।